প্রথমে গরমের ছুটি, তারপর ভোটের ছুটি আর এখন অশান্তির ছুটি। সব মিলিয়ে গত দু’মাস লাগাতার ছুটি ছুটি উৎসব। ভাঙড় ২ ব্লকের কাশীপুর থানা এলাকায় নির্বাচনী হিংসার জন্য বন্ধ একাধিক সরকারি, বেসরকারি স্কুল। বৃহস্পতিবার স্থানীয় স্কুলগুলি খোলার কথা থাকলেও নতুন করে বাহিনী ঢোকায় বন্ধ স্কুলের সদর দরজা। ফলে একাধিক স্কুলে এ দিন পড়ুয়ারা এসে ফিরে যায়। ভাঙড় ২ ব্লকের স্কুল পরিদর্শক মীরা গুপ্তা বলেন, ‘থানার ওসি, বিডিও মিলে ঠিক করেন কোন স্কুলে কত ফোর্স থাকবে। এলাকা শান্ত না হলে ফোর্স যাবে না। আর স্কুল খোলার আগে বাচ্চাদের নিরাপত্তা তো সুনিশ্চিত করতে হবে।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কেবল কাশীপুর থানা এলাকাতেই ৯৪টি প্রাথমিক, ৮টি উচ্চ মাধ্যমিক, ২টি মাধ্যমিক এবং তিনটি হাই মাদ্রাসা আছে। সব মিলিয়ে এই স্কুলগুলিতে পড়াশোনা করে লক্ষাধিক পড়ুয়া। ভাঙড় ২ ব্লকের গণনাকেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল কাঁঠালিয়া হাইস্কুলকে। ১১ তারিখ গণনা মিটে গেলেও ওই রাতে স্কুলের বাইরে তিনজন গুলিতে নিহত হওয়ার পর স্কুলে এখনও বাহিনী আছে।
এ দিন স্কুলে গিয়ে দেখা যায় গোটা স্কুল লন্ডভন্ড। স্কুলের মাঠ নরক। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জার্জিস হোসেন বলেন, ‘আমার রুমটা অবজার্ভারের রুম করা হয়েছিল। সেই রুমের দেওয়ালে বোমা মারা হয়েছে, জানলার কাচ ভেঙে গেছে। স্কুলের একশো বেঞ্চ, টেবিল নষ্ট হয়েছে। দশটা ক্লাসরুমে কংক্রিটের গাঁথনি করে স্ট্রংরুম করা হয়েছিল। ল্যাবরেটরির ক্ষতি হয়েছে। কবে সব স্বাভাবিক হবে জানি না।’
কাঁঠালিয়া থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পোলেরহাট হাইস্কুল। এ দিন ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকরা গিয়ে দেখেন স্কুলে নতুন করে কেন্দ্রীয় বাহিনী ঢুকেছে। স্কুলের দু’টি তলার ৩০টি ক্লাসরুমের দখল নিয়েছে তারা। প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সরকার বলেন, ‘গরমের ছুটির পর মাঝে কয়েকটা দিন স্কুল খোলা ছিল। ভোটের জন্য ২৯ জুন থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত স্কুল নেয় কমিশন। আজ থেকে খোলার কথা ছিল। সকালে এসে দেখি রাতে নতুন করে বাহিনী ঢুকেছে। বাধ্য হয়ে স্কুল বন্ধ করে দিতে হলো।’
কাশীপুর থানার কাছে বেসরকারি স্কুল কিশোর ভারতীর শিক্ষক পলাশ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘পুলিশের অনুরোধে প্রথমে ২৫ জন ফোর্স থাকার জন্য তিনটি রুম দিই। তারপর অশান্তি যত বাড়ে ৫০, ১০০ করে এখন প্রায় ২০০ ফোর্স আছে। স্কুল বন্ধের জন্য অভিভাবকরা অসন্তুষ্ট।’ কচুয়া হাইস্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘ভাঙড়ে যারা স্কুলছুট তারা কিশোর বয়সেই বোমা, বন্দুক হাতে তুলে নিয়েছে। যারা এখনও কলম ধরে রেখেছে তাদের পড়াশোনাটাও লাটে উঠল।’ বারুইপুরের মহকুমা শাসক সুমন পোদ্দার বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে ওখানে আরও দশদিন বাহিনী থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিক স্কুলগুলো স্থানীয় ভাবে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে স্কুল খুলতে পারে।’