ফিরে দেখা ১৯৯৩-এর ২১ জুলাই
যে সময়ের এই ঘটনা অর্থাৎ ১৯৯৩ সাল, সেই সময় অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম হয়নি। তখন রাজ্যে যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে তখন বামফ্রন্ট সরকার, মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে সচিত্র ভোটার কার্ডের দাবি তোলেন মমতা। আর সেই দাবি নিয়েই মহাকরণ অভিযানের ডাক দেয় যুব কংগ্রেস। সকাল ১০টা থেকে জমায়েত শুরু হয়। মোট পাঁচটি এলাকা দিয়ে মিছিল করে এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকেরা। রাস্তায় নামেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্রের মতো নেতারা। এদিকে যুব কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযানকে আটকাতে পথে নামে পুলিশও। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় তৈরি করা হয় ব্যারিকেড। বাধা পেয়েই উত্তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় আন্দোলনকারীদের। অভিযোগ, পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইট ও পাথরবৃষ্টি। পালটা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশও।
অসুস্থ মমতা
ব্রেবোর্ন রোডে ধাক্কাধাক্কি এবং কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় মেয়ো রোড ও রেড রোডের সংযোগস্থল। বোমাবাজি হয় বলেও অভিযোগ। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের ভ্যানে। অভিযোগ, পুলিশের দিকে মারমুখী হয়ে ছুটে যান যুব কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকেরা। এরপরেই পুলিশ পালটা গুলি চালায় বলে অভিযোগ। আর তাতেই মৃত্যু ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। ঘটনায় আহতও হন অনেকে।
মৃতদের নাম
সেদিনের সেই ঘটনায় যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল তাঁরা হলেন-
১. শ্রীকান্ত শর্মা
২. দিলীপ দাস
৩. মুরারী চক্রবর্তী
৪. রতন মণ্ডল
৫. কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
৬. বিশ্বনাথ রায়
৭. অসীম দাস
৮. কেশব বৈরাগী
৯. রঞ্জিত দাস
১০. প্রদীপ রায়
১১. বন্দনা দাস
১২. ইনু মিঞা
১৩. আবদুল খালেক
সেই ঘটনাকে ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য তথা জাতীয় রাজনীতি। পরবর্তীতে অবশ্য গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। রাজ্য রাজনীতিতেও পরিবর্তন এসেছে বহু। কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। আবার ওই ঘটনার সময় যিনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন, সেই মণীশ গুপ্তাও যোগ দেন তৃণমূলে। কিন্তু এতকিছুর পরেও সেদিনের সেই শহিদদের ভোলেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ওই জন্যই সেই ১৩ জন শহিদকে আজও বছরের পর বছর স্মরণ করে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।