তেলেভাজা খেতে পছন্দ করে না, এমন বাঙালি পাওয়া খুবই কঠিন! গত শতকের আশির দশক থেকে কলকাতার রাস্তার খাবারে চাউমিন জাতীয় চিনা খাবার আর এগরোল-চিকেনরোলের মতো চটজলদি তৈরি হওয়া খাবার আমদানি হওয়ার আগে পর্যন্ত মুড়ি-তেলেভাজাই ছিল মধ্যবিত্ত বাঙালির অন্যতম সেরা জলখাবার।
গোটা কলকাতাজুড়েই আছে অসংখ্য তেলেভাজার দোকান। এক দিকে যেমন রাস্তার ধারে ফুটপাথে উনুন পেতে তেলেভাজা বিক্রি হয়, অন্য দিকে অনেক সাজানো-গোছানো দোকানও রয়েছে শুধু তেলেভাজা চপ, পিঁয়াজি বিক্রির জন্য। মধ্য কলকাতার কলেজ স্কোয়ারের কাছে, সূর্য সেন স্ট্রিটের উপরে, ১৯৬৫ সালের এক কালীপুজোর দিনে চপের দোকান খুলেছিলেন সুকুমার দত্ত।
কালীপুজোর দিনে উদ্বোধন তাই দোকানের নাম দেওয়া হয় ‘কালীকা’। গোড়ার দিকে শুধু আলুর চপ, বেগুনি, ধোঁকা, ফুলুরির মতো নিরামিষ চপই বিক্রি হত সেখানে। সত্তরের দশক থেকে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা আরম্ভ করলেন চপ জাতীয় খাবারের বিভিন্ন দিক নিয়ে।
আগেকার দিনে চপ বলতে সাধারণ ভাবে সেদ্ধকরা আলুকে মশলা দিয়ে কষে পুর তৈরি করে, লেচির মতো কেটে তাকে ফেটানো বেসমে ডুবিয়ে গরম তেলে ভালো করে ভাজাকে বোঝাতো। আবার আলু ছাড়াও মোচা বা অন্য কোনও সবজির পুর তৈরি করে তাকে বেসমে ডুবিয়ে অন্যান্য অনেক রকম চপ তৈরি হত।
ব্যতিক্রম ছিল ভেজিটেবল চপ। বিট, গাজর ও অন্যান্য সবজির পুর তৈরি করে তার গায়ে লেড়ো বিস্কুটের প্রলেপ লাগিয়ে তেলে ভেজে তৈরি হয় ভেজিটেবল চপ। খাদ্যবিশারদেরা বলেন, এই রকম লেড়ো বিস্কুটের প্রলেপ মাখানো চপ নাকি বিদেশিদের দেখাদেখি বাঙালি তথা ভারতীয়দের খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে!
যাই হোক, সুকুমার দত্ত ও তাঁর ছেলেরা সত্তরের দশক থেকে সাবেক বেসনে ডোবানো আলুর চপ, বেগুনির মতো নিরামিষ চপের পাশাপাশি চিংড়ি মাছ, ভেটকি মাছ, মাংসের পুর দেওয়া লেড়ো বিস্কুটের প্রলেপ লাগানো চপ তৈরি আরম্ভ করলেন।
শুরু থেকেই সাফল্য পেল ওই নতুন উদ্যোগ। এর অন্যতম কারণ হল, স্থানীয় অধিবাসী ছাড়াও কালিকার চপের দোকানের একটা বড় অংশের ক্রেতা হল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং অফিস ফেরৎ মানুষজন। চপ জাতীয় খাবারে আমিষ মাছ-মাংসের স্বাদ খুবই পছন্দ হল নবীন প্রজন্মের ছাত্রছাত্রী এবং কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ি ফেরা মানুষজনের।
আরও কিছুকাল পর, কালিকার মেনুতে ঢুকলো ফিসফ্রাই, ফিসরোল, চিকেন কাটলেটের মতো আধুনিক খাবার। এখনও সেই মেনুই বজায় আছে মধ্য কলকাতার তেলেভাজা-আইকন কালিকার তেলেভাজার দোকানে।