পঞ্চায়েতে গণনার দিন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়ার ভুরকুণ্ডার ৩১ নম্বর বুথে ঘটে নজিরবিহীন এক ঘটনা। চার ভোটে সিপিএম প্রার্থীর কাছে হেরে যাচ্ছিলেন অশোকনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহাদেব মাটি। অভিযোগ, হার বাঁচাতে তিনি আস্ত ব্যালটের বান্ডিলেই দেন কামড়। ব্যালেটের বান্ডিলের একাংশ চিবিয়ে খেয়েও ফেলেন তিনি বলে অভিযোগ। ব্যাট বক্স চুরি, ব্যালট পুকুরে ফেলা, ব্যালটে কালি-তেল-ভারতের ফ্যান সমস্ত নজির ছাপিয়ে ট্রেন্ডিং ভোটের আস্ত ব্যালট চেবানো। একুশে জুলাইয়ের প্রাক্কালে তৃণমূল শিবিরের মন্ত্রী বিধায়ক নেতাদের নৈশভোজে সেই নিয়েও চলল ঠাট্টা মস্করা।
একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল কর্মীদের থাকার জন্য ক্যাম্প তৈরি হয়। শহরের বাইরে থেকে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত, জেলা থেকে কলকাতায় আসা কর্মী সমর্থকদের জন্য কলকাতার একাধিক জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তার মধ্যে ছিল বিধাননগরের সেন্ট্রাল পার্কও। তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে সেই ক্যাম্পগুলিতে ব্যবস্থাপনা তদারকি করেন। কর্মীদের জন্য ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে ও তাদের সঙ্গে কথা বলতে প্রতিটা ক্যাম্পে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পরিদর্শনের মাঝেই একুশের আগে একদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নৈশাহার সারেন দলের নেতা, মন্ত্রী ও বিধায়কেরা। সেখানে উপস্থিত থাকলেও ডিনার করেননি অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। দলীয় সূত্রে খবর, তিনি নৈশাহার না করায় দলের কয়েকজন মস্করা করে মন্তব্য করেন, ‘ওঁর ব্যালট খেয়ে পেট ভর্তি, তাই খাচ্ছে না।’ উল্লেখ্য, দলীয় সূত্রে খবর, বিষয়টি ঘটে খোদ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই এবং সেদিন কিছু না খেয়েই চলে এসেছিলেন বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়ার ভুরকুণ্ডার ৩১ নম্বর বুথে অশোকনগর বিধানসভার অন্তর্গত। সেই বুথের তৃণমূল প্রার্থী মহাদেব মাটির বিরুদ্ধেই ব্যালট খাওয়ার অভিযোগ। তাই মনে করা হচ্ছে অশোকনগরের বিধায়ক হওয়ার কারণেই সহকর্মীদের এমন মস্করার শিকার বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী।
বিষয়টি নিয়ে এই সময় ডিজিটালের পক্ষ থেকে বিধায়ককে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টির সতত্য স্বীকার করেন এবং বলেন, ‘ব্যাপারটা একদমই মজার ছলে হয়েছিল এবং এটা একেবারেই দলের অভ্যন্তরের ব্যাপার। ফলাও করে সংবাদ মাধ্যমকে জানানোর কোনও বিষয় নয়।’ ব্যালেট কাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকা সত্ত্বেও এমন ঠাট্টার শিকার হয়ে কী প্রতিক্রিয়া বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর? এই সময় ডিজিটালের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা একদমই ব্যক্তিগত আলাপচারিতা। আমরাও তো মানুষ। হাসি-কান্না, ঠাট্টা-তামাশা সবকিছুই হয়। আমরা হয়তো বড় বড় পদাধিকারী, কিন্তু আমরাও মানুষ। কিন্তু সেদিন যা হয়েছে সেটা প্রেসকে বিবৃতি দেওয়ার মতো না। আমি সেদিন বাড়ি এসে খাব বলে ডিনার করিনি।’ বিধায়কের প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও ব্যালট নিয়ে থামছে না আলোচনা। সেই আলোচনার অংশ খোদ শাসকদলও।