মৃত্যুঞ্জয় দাস: বারো বছর আগে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে সস্ত্রীক আত্মসমর্পণ করেছিলেন মাওবাদী গেরিলা নেতা রাজারাম সোরেন। কিন্তু ঝাড়খণ্ড পুলিসের কাছে ১২ বছর পরও তিনি ফেরার। আর ঝাড়খণ্ড পুলিসের খাতায় ফেরার সেই রাজারামের বিরুদ্ধেই এবার হুলিয়া জারি করল জামশেদপুর আদালত। রবিবার ঝাড়খণ্ডের পটমদা থানার পুলিস বাঁকুড়ার রানীবাঁধ থানার মিঠাম গ্রামে রাজারামের বাড়িতে গিয়ে সেই হুলিয়া নোটিস সেঁটে দিয়ে আসল। আর এতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
আরও পড়ুন-মহামারির আকার নিচ্ছে ডেঙ্গি! রোগীর চাপ সামলাতে এবার হাসপাতালে ‘গেটকিপিং’
নিয়ম অনুযায়ী কোনও অভিযুক্ত ব্যক্তি ফেরার থাকলে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিসের আবেদনের ভিত্তিতে হুলিয়া জারি করে আদালত। কিন্তু আত্মসমর্পনকারী কোনও অভিযুক্তর নামে এভাবে হুলিয়া জারি হওয়া বিরল ঘটনা। এ রাজ্যে আত্মসমর্পনকারী মাওবাদীদের মধ্যে এই প্রথম কোনও প্রাক্তন মাওবাদীর নামে হুলিয়া জারির ঘটনা ঘটল।
রাজ্য পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে ২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন মাওবাদী গেরিলা নেতা রাজারাম সোরেন ও তাঁর স্ত্রী মাওবাদী স্কোয়াড সদস্যা জাগরী বাস্কে। আত্মসমর্পণের ঘোষিত প্যাকেজ অনুযায়ী পরবর্তীতে রাজ্য পুলিসের স্পেশাল হোমগার্ড পদে চাকরী পান রাজারাম । বাঁকুড়া সংলগ্ন একটি জেলায় তিনি কর্মরত । সেখানেই তিনি তাঁর স্ত্রী জাগরী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন । হুলিয়ার নোটিস অনুযায়ী জানা গিয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজারামকে জামশেদপুর আদালতে হাজিরা দিতে হবে।
নতুন করে রাজারামের নামে জামশেদপুর আদালত হুলিয়া জারি করায় রীতিমত বিব্রত রাজারামের পরিবারের লোকজন। বাঁকুড়ার পুলিস সুপার বৈভব তেওয়ারি টেলিফোনে জানিয়েছেন, “বিষয়টি তারা জেনেছেন । পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য উচ্চস্তরে জানানোর পাশাপাশি আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে” ।
পুলিস সূত্রে জানা গেছে ১৯৯৮ সালে তৎকালীন এমসিসির( মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার) হাত ধরে জঙ্গলের জীবন বেছে নেন বাঁকুড়ার রানীবাঁধ ব্লকের মিঠাম গ্রামের বাসিন্দা রাজারাম সোরেন । ২০০৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এমসিসি ও জনযুদ্ধ গোষ্ঠী যুক্ত হয়ে সিপিআই (মাওবাদী) নামে আত্মপ্রকাশ করলে রাজারাম অযোধ্যা স্কোয়াডের দায়িত্ব পান । মূলত রাজারামের নেতৃত্বেই ২০০৫ থেকে ২০০৬ এর মধ্যে মাওবাদীদের গেরিলা অযোধ্যা প্ল্যাটুন গঠিত হয় । সংগঠনের সূত্রেই রাজারামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে স্কোয়াদ সদস্যা জাগরী বাস্কের । ২০০৬ সালে দুজনে বিয়েও সেরে ফেলেন । পরবর্তীতে তাঁদের একটি পুত্র সন্তান হলে ধীরে ধীরে জাগরী সংগঠন থেকে দূরত্ব বৃদ্ধি করে । তবে সংগঠনে রাজারামের গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পায় । সিপিআই মাওবাদী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য করা হয় রাজারামকে । ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের কিছুদিন আগে থেকে মাওবাদী নেতা বিক্রম ওরফে অর্ণব দামের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় রাজারাম সংগঠনে ক্রমশ গুরুত্ব হারাতে থাকেন । পরবর্তীতে ২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর পুলিসের সহায়তায় সরাসরি মহাকরণে সস্ত্রীক গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ করেন রাজারাম।