এদিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি আজ, বৃহস্পতিবার বিধানসভায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব পেশ করে আলোচনার দাবি তুলবে। ইতিমধ্যে বিজেপির সচেতক মনোজ টিগ্গা-ও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। কিন্তু ধূপগুড়ির বিজেপি বিধায়কের প্রয়াণে সেই প্রস্তাব সভায় উত্থাপিত হয়নি।
গেরুয়া শিবিরের দাবি মেনে নেওয়ার কোনও ইঙ্গিত না দিয়েই শোভনদেব এ দিন বলেন, ‘বিজেপি যে মুলতুবি প্রস্তাব এনেছিল তার সব বিষয়ের সঙ্গে আমরা একমত নই। কিন্তু আমরাও চাই পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হোক। কী ফর্মে আলোচনা হবে তা কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ঠিক হবে।’
সরাসরি পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনলে তা গৃহীত হবে না ধরে নিয়েই শুভেন্দু আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব পেশ করার কৌশল নিয়েছেন।
তাঁর কথায়, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে প্রস্তাব আনলে তা বিচারাধীন বলা হবে, তাই সার্বিক ভাবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বৃহস্পতিবার মুলতুবি প্রস্তাব পেশ করা হবে। আমি নিজেও থাকব।’ তবে রাজ্যের শাসক দল পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চাওয়ায় মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘সরকারপক্ষ কী ভাবে আলোচনা চাইছে, প্রস্তাবের বয়ানে কী থাকছে, তা দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’ মনোজও বিষয়টি স্পষ্ট না করলেও বিজেপি এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
ইতিমধ্যে বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওঠা সন্ত্রাসের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে প্রাক্তন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের নেতৃত্বে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডার কাছে। ওই রিপোর্টে সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। দিল্লিতে রবিশঙ্কর এ দিন বলেন, ‘ভোট-সন্ত্রাসের যে ঘটনাগুলি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঘটেছে, সেগুলির সিবিআই তদন্ত করা উচিত। মুড়ি-মুড়কির মতো যেভাবে বোমাবাজি হয়েছে, তা এনআইএকে দিয়ে তদন্ত করা হোক।’
এই প্রসঙ্গে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম বাড়িতে বসে নয়, বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দিয়েছেন। ফলে এই রিপোর্টের গুরুত্ব রয়েছে।’ অন্যদিকে, রবিশঙ্করের অভিযোগ নিয়ে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘একগুচ্ছ মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম মণিপুরে কেন যাচ্ছে না? যে সন্ত্রাস হয়েছে তা বিজেপি করেছে। মণিপুর থেকে নজর ঘোরাতে এ সব কাজ করা হচ্ছে।’
এই প্রেক্ষিতে বিধানসভায় আগামী সোমবার মণিপুরের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হতে চলেছে। আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। তার আগেই এ দিন বাংলায় নারী নির্যাতন নিয়ে অগ্নিমিত্রা পল, শ্রীরূপা মিত্রের নেতৃত্বে বিজেপি মুলতুবি প্রস্তাব পেশ করতে গেলে পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তা খারিজ করে দেন। এরপর বিজেপি ওয়াকআউট করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এদিন হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাঁচ নির্যাতিতাকে বিধানসভায় এনে এই বিক্ষোভে সামিল করে বিজেপি।
ইতিমধ্যেই পাকুয়াহাটের ঘটনা নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মালদার পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে। যদিও ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ মানবাধিকার কমিশনের এই পদক্ষেপকে গুরুত্ব দিতে চাননি। শোভনদেবের কথায়, ‘রোজ কোনও না কোনও টিম আসে, রিপোর্ট চায়, একে গুরুত্ব দিতে চাই না, কিন্তু মণিপুরের ঘটনার সঙ্গে কোনও ঘটনা তুলনীয় নয়।’