পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, ইংরেজির ওই অধ্যাপিকা ক্লাস চলাকালীন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কথা বলতে গিয়ে তাঁদের ‘অ্যাবনর্মাল’, ‘সাইকোটিক’, ‘ডিফেক্টিভ’ বলে চিহ্নিত করেছেন। এতে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ছাত্রী। অসম্মানের ভয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়েও যান। পরে তিনি ও তাঁর সহপাঠীরা এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন। তাতে প্রতিকার মেলেনি বলে অভিযোগ। ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে সামিল হন তাঁরা।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য রাজকুমার কোঠারি জানান, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এমন অভিযোগ ওঠাও কাঙ্ক্ষিত নয়। তিনি বিষয়টি দেখার ভার দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্নাল কমপ্লেন্টস কমিটি বা আইসিসি-কে। পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে অধ্যাপিকা যে পাল্টা অভিযোগ এনেছেন, তা খতিয়ে দেখতেও পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
কিছুদিন আগেই স্কটিশচার্চ কলেজে সমপ্রেমী বিয়ে নিয়ে তৈরি ফিল্ম ‘গে ইন্ডিয়া ম্যাট্রিমনি’র প্রদর্শন বন্ধে বিতর্ক বাধে। সে ক্ষেত্রে কিছু ছাত্রছাত্রীরই অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রদর্শনী থমকায় বলে জানা যায়। সংস্কৃত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সে জায়গা থেকেও ব্যতিক্রমী। যার অন্যতম প্রধান কারণ, রামধনু পতাকা হাতে ক্যাম্পাসে যে পড়ুয়ারা বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই ‘এলজিবিটিকিউ’ কমিউনিটির নন। ওই অধ্যাপিকার বক্তব্যের বিরোধিতা করে প্রতিবাদে সামিল যাঁরা, যাঁরা ছবি-ভিডিয়ো-লেখা শেয়ার করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই তৃতীয় লিঙ্গের নন।
ইংরেজি বিভাগের অভিযোগকারী ছাত্রীর কথায়, ‘একজন শিক্ষিকা ক্লাসে প্রকাশ্য ভাষণে এ ধরনের একাধিক আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করে আসলে ফোবিয়া ছড়াচ্ছেন। আমি অত্যন্ত অস্বস্তি এবং অপমানিত বোধ করেছি বলেই অভিযোগ করেছি। কিন্তু এ নিয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করছেন না।’ তাঁর হয়ে ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত এক ছাত্রের বক্তব্য, ‘ব্যক্তিগত জেন্ডার আইডেন্টিটিকে এখানে গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমাদের ওই বান্ধবী নিজেকে কুইয়ার কমিউনিটির বলে পরিচয় দেন। তাঁর পাশে আমরা আছি। তবে ক্লাসে এমন কেউ না থাকলেও অধ্যাপিকার মন্তব্যের বিরোধিতা করতাম।’
অধ্যাপিকার বক্তব্যের নির্যাস – তিনি ক্লাসে এমন কোনও শব্দ ব্যবহার করেননি। পড়ুয়াদের হয় বুঝতে ভুল হয়েছে, বা ইচ্ছে করে তাঁকে কালিমালিপ্ত করতে মিথ্যাচার চলছে। তাঁর দাবি, তিনি একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপিকা। ক্লাস লেকচারে কেমন শব্দ ব্যবহার করা যায়, আর কোনটা ব্যবহার করা যায় না, তা তাঁর ভালোই জানা আছে। অধ্যাপিকার বক্তব্য, ‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি আমার কোনও বিদ্বেষ নেই। আমি তাঁদের ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দকে সম্মান করি।’ বিক্ষোভের সময়ে পড়ুয়ারা শারীরিক ভাবে হেনস্থা করেছে বলে পাল্টা অভিযোগ জানিয়েছেন তিনিও।