মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য: হাসপাতালে ভর্তির পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটাই উঠেছে। তার পরও তাঁকে শুধু স্থিতিশীল করাই এখন চিকিত্সকদের কাছে চ্যালেঞ্জ নয় বরং তার অন্যান্য যেসব সমস্য়া রয়েছে তারও নিরাময় করা। চিকিত্সকদের কাছে এখন সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জ তা হল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাইল্যাটারাল নিউমোনিয়া ধরা পড়েছে। আর্থাত্ তাঁর দুটি ফুসফুসেই নিউমোনিয়ার সংক্রমণ রয়েছে। পাশাপাশি তাঁর গ্রেড ২ রেসপিরেটরি ফেলিওর রয়েছে। এই দুটি বিষয় সবচেয়ে বেশি চিন্তায় রাখছে চিকিত্সক দলকে।
আরও পড়ুন-সত্দাদার দিকে অভিযোগের তির; মাঠের গর্ত থেকে উদ্ধার ৮ বছরের বালকের দেহ, তুলকালাম এলাকা
হাসপাতালের চিকিত্সক উত্পল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে বুদ্ধবাবুর ফুসফুসে একটা সংক্রমণ হয়েছে। সেই ইনফেকশনের সঙ্গে রেসপিরেটরি ফেলিওর হচ্ছে। তাছাডা় ওঁর রক্তে ইনফেকশনও রয়েছে। আপাতত উনি আইসিইউতে রয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ভর্তি হওয়ার পর বুদ্ধদেব বাবুর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়েছিল। তিনি চোখ খুলে তাকিয়েওছিলেন। কিন্তু সন্ধের পরই তিনি ফের কিছুটা আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন। একটা আশার কথা হল রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা যেখানে ৭০ এর ঘরে নেমে গিয়েছিল তা এখন ৯০ এর উপরে। রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। চিকিত্সা পরিভাষায় বুদ্ধববাবু হিমোডায়ানামেক্যালি স্টেবল রয়েছেন। কিন্তু চিন্তায় রাখছে ফুসফুসের ওই নিউমোনিয়া। আশি ছুঁইছুই কোনও রোগীর জন্য যা যথেষ্ঠই চিন্তার। নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রেখে আপাতত তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন, ব্লাড প্রসার স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা হচ্ছে। এখন নিউমোনিয়া ও রেসপিরেটরি ফেলিওয় সামাল দেওয়ার জন্য যাবতীয় চিকিত্সা চালু করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর ইতিমধ্যেই তাঁরে বেশকিছু রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। এক্সরে, লাং ফাংশান টেস্ট করা হয়েছে। তাঁর লোয়ার রেস্পিরেটরি ট্রাকে একটা ইনফেকশন রয়েছে। তাঁর গ্রেড ২ লাং ফেরিওর রয়েছে। পাশাপাশি তাঁর নিউমোনিয়াও থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছিলেন চিকিত্সকেরা। তার জন্য রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন চিকিত্সক টিম। এদিকে, জানা যাচ্ছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হার্টের সামান্য সমস্যা রয়েছে। তাঁর হার্টের ব্লকের কিছু ইঙ্গিত মিলেছে রিপোর্টে। ফলে সেই দিকটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে চিকিত্সকদের।
এদিকে, আজ হাসপাতালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখতে যান সূর্যকান্ত মিশ্র। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, এখন স্থিতিশীল রয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু ফুসফুসে একটি সংক্রমণ রয়েছে। একটু আচ্ছন্ন রয়েছেন। বাকী তেমন কোনও সমস্যা নেই। বেশকিছুদিন ধরে আমরাও দেখছি উনি মাঝেমধ্যে আচ্ছন্ন থাকেন। আরও কিছু পরীক্ষা হচ্ছে।
বুদ্ধবাবুর চিকিত্সায় ৮ সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। সেই টিমে রয়েছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা কৌশিক চক্রবর্তী, ক্রিটিক্য়াল বিশেষজ্ঞ ডা সৌপ্তিক পান্ডা ও ডা সুস্মিতা দেবনাথ, কার্ডিওলজিস্ট ডা সরোজ মণ্ডল, পালমোলজিস্ট ডা অঙ্কন বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্টারন্যাল মিডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা ধ্রুব ভট্টাচার্য, অ্যানাস্থিতিওলজিস্ট ডা আশীস পাত্র, ডা সোমনাথ মাইতি ও ডা সপ্তর্ষী বসু।
অতীতে দেখা গিয়েছে অসুস্থ হলেও হাসপাতালে আসতে চান না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এর আগেও হাসপাতালে ভর্তি করতে তাঁর দলের কর্মীদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, এবার তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া তাঁর পারিবারিক চিকিত্সকেরা সিদ্ধান্ত নেন দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন রাজ্যপাল সিবি আনন্দ বোস। ফোন খবর নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের তরফে হাসপাতালে চলে আসেন রবীন দেব। এছাড়াও হাসপাতালে আসেন বুদ্ধবাবুর স্ত্রী মীর ভট্টাচার্য ও বুদ্ধদেবের একমাত্র সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য। আগেও একাধিক বার তাঁর শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়েছে। বাড়িতেও অক্সিজেন মজুত রাখা হয়। তবে এবার বেশ বাড়াবাড়ি হয়ে যায়।