দিন কয়েক আগেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বিধানসভাতেই বলেছিলেন, ‘তৃণমূল আমাকে মেদিনীপুরের নেতা করে রেখে দিয়েছিল। বিজেপি আমাকে রাজ্যের নেতা করেছে।’ বিধানসভার প্রেস কর্নারে সাংবাদিক বৈঠকে এ জন্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে ধন্যবাদও জানান তিনি।
আবার, সদ্য বিজেপির জাতীয় পদাধিকারীদের কমিটি থেকে বাদ পড়ে দিলীপের গলায় উল্টো সুর। রাজ্যের হেভিওয়েট নেতা থেকে রাতারাতি মেদিনীপুরের নেতা বনে যাওয়ায় ঘনিষ্ঠ মহলে আক্ষেপই করছেন তিনি। দিলীপের কথায়, ‘দল আমাকে মেদিনীপুরে সময় দিতে বলেছে। দলের নির্দেশ মেনে আপাতত আমি শুধু নিজের লোকসভা কেন্দ্র মেদিনীপুরেই ফোকাস করব।’
অথচ রাজনীতির ময়দানে নেমে দিলীপের উত্থান হয়েছিল কার্যত ঝড়ের গতিতে। বিজেপিতে নাম লিখিয়েই তিনি দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছিলেন। তার বছর খানেকের মধ্যে পার্টির রাজ্য সভাপতি। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে জিতে বিজেপি ক্ষমতায় এলে দিলীপের মুখ্যমন্ত্রীর হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও প্রবল জল্পনা তৈরি হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে।
শুভেন্দু অবশ্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পথেই রাজনৈতিক উত্থানে বিশ্বাসী। বিজেপিতে নাম লেখানোর দিনই সে কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। অমিত শাহদের উপস্থিতিতে মেদিনীপুরের সভায় শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘আমি প্যারাশুটে নামিনি। লিফটেও উঠিনি।’ দিলীপকে নিশানা করে সে দিন শুভেন্দু এ কথা না বলেননি। কিন্তু বিজেপির অন্দরের বর্তমান রাজনৈতিক আবহে শুভেন্দুর সেই ‘প্যারাশুট-তত্ত্ব’ ঘটনাচক্রে দিলীপের জন্যই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিজেপিতে প্রথম থেকেই শুভেন্দু-দিলীপের বনিবনা তেমন হয়নি। শুভেন্দুকে খোঁচা দিয়ে একাধিক বার মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছেন দিলীপ। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসেবে শুভেন্দু যখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘তারিখের রাজনীতি’ করছিলেন, তখনও দিলীপকে প্রকাশ্যে ‘ভেটো’ দিতে দেখা গিয়েছে। শুভেন্দু অবশ্য বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেন না। কিন্তু দিলীপের লাগাতার খোঁচায় তিনিও কখনও সখনও মেজাজ হারিয়েছেন।
দলীয় সভা থেকে শুভেন্দুকে একবারই নিজের দলের কোনও নেতার মর্নিং-ওয়াক নিয়ে কটাক্ষ করতে দেখা গিয়েছিল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, শুভেন্দু যতই বিজেপির শীর্ষ নেতাদের পছন্দের পাত্র হয়ে উঠেছেন, ততই দিল্লির চোখে গুরুত্ব হারিয়েছেন দিলীপ। তারই ফলস্রুতি হিসেবে শুভেন্দু মেদিনীপুরের চৌহদ্দির বাইরে বেরিয়ে বর্তমানে বঙ্গ-বিজেপির মুখ। আর বঙ্গ-বিজেপির প্রাক্তন মুখ দিলীপের গতিবিধি কাঁটছাট করতে করতে আপাতত সীমাবদ্ধ সেই মেদিনীপুরে।
তবে দিলীপ ঘনিষ্ঠরা হাল ছাড়ছেন না। তাঁদের দাবি, শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের মুখ হলে দিলীপ ঘোষও দেশের মন্ত্রী হবেন। তারই প্রস্তুতি চলছে। দিলীপ অবশ্য এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ছ’মাস অন্তর অন্তর আমার মন্ত্রী হওয়ার জল্পনা ছড়ায়। আমার কাছে এ রকম কোনও খবর নেই। দল যা নির্দেশ দেবে, তা-ই করব।’