তিন চাকার ভ্যান থেকে কাঁধে সিলিন্ডার চড়িয়ে বাড়ির বেল বাজাচ্ছে খাকি উর্দি – এমন দিন কি শেষ হতে চলেছে? গৃহস্থের ঘরে পাইপলাইনে এলপিজি গ্যাস সরবরাহের জন্য ‘সিটি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক’-এর (সিজিডিএন) পরিকাঠামো গঠনে নীতি নির্ধারণ করলো রাজ্য সরকার। গত ২৬ জুলাই সেই নীতি প্রকাশ করেছে পূর্ত দপ্তর। নগর-জনপদ-জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কীভাবে এই পাইপলাইন পাতা হবে, কলকাতা-সহ নানা জায়গায় সমীক্ষা চালানো, গ্যাস পাইপলাইন বসানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্সি/সংস্থাগুলিকে জমি, পরিকাঠামো পুনরুদ্ধার, সিকিউরিটি ডিপোজিট, অ্যাপ্লিকেশন ফি ইত্যাদি বাবদ কত অর্থ দিতে হবে – সবই রয়েছে ১৬ পাতার এই নীতিতে।
নবনির্ধারিত নীতিটির সূচনাতেই পূর্তসচিব জানিয়েছেন, ‘এই মুহূর্তে ‘লিকুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস’ (এলপিজি) সিলিন্ডার ফিলিং স্টেশন থেকে গৃহস্থদের বাড়ি বাড়ি সড়ক পরিবহণের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়াই চল। এর জেরে রাস্তায় ট্রাফিকের উপর চাপ সৃষ্টি হয়। পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেই প্রেক্ষিতে ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে অনুঘটকের কাজ করবে।
সাধারণ মানুষের কাছে নিরাপত্তার নানা শর্ত বজায় রেখে অপেক্ষাকৃত সস্তায় রান্নার গ্যাস সরবরাহের কাজটি সুগম হবে।’ সেদিকে নজর রেখেই যে পেট্রোলিয়াম ন্যাচারাল গ্যাস রেগুলেটারি বোর্ড শহরাঞ্চলে ভূগর্ভে পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সরবারাহের কাজটির দায়িত্ব দিচ্ছে লাইসেন্সড কোম্পানিগুলিকে, সেটাও এই নীতিতে উল্লেখ রয়েছে।
সংস্থাগুলি কাজ শুরু করতে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ পেতে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থাগুলির দ্বারস্থ হচ্ছে। পূর্ত দপ্তর প্রণীত নীতিতে স্বীকার করা হয়েছে, এযাবৎ কোনও ‘সুনির্দিষ্ট’ নীতি না থাকায় কোম্পানিগুলি নানা সমস্যায় পড়ছে। নীতিতে বলা হয়েছে, দুই ধরনের পাইপ ভূগর্ভে বসবে। উচ্চ চাপ সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন স্টিল পাইপলাইন ও মাঝারি/নিম্ন চাপের জন্য মিডিয়াম ডেনসিটি পলিথিলিন (POLYETHYLENE) পাইপলাইন। স্টিলের পাইপ প্রতিটি জেলায় গড়ে ১০০-১৫০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে থাকে। মিডিয়াম ডেনসিটি পলিথিলিন পাইপের ব্যাপ্তি গড়ে ১০০০-১৫০০ কিলোমিটার। এটি বসানো হয় মূলত অলিগলিতে।
নীতিতে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলি সরকার নির্ধারিত দপ্তর/স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থাগুলির কাছে আবেদন করবে। আবেদনের পদ্ধতি হবে ‘সিঙ্গল উইনডো মেকানিজম’। কোন কোন দপ্তর বা স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থার কাছে আবেদন করতে হবে, তা অল্প কিছুদিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। তবে, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাইপলাইন বসানো হলে আলাদা করে বন দপ্তরের কাছ থেকে এনওসি নিতেই হবে।