পালিত ছেলের ডিএন‌এ পরীক্ষা সম্ভব নয়, করমণ্ডল দুর্ঘটনায় হতের দেহ ফেরাতে হন্যে পরিবার


দু’মাস পূর্ণ হল। সেই বিভীষিকাময় রাতের স্মৃতি আজও তাড়া করে বেড়ায় দু’জনকে। সন্তান স্নেহ সমানে ভাগে বণ্টন করেছিলেন দুই ছেলের মধ্যেই। এক ছেলের দেহটুকু মিললেও, আরেক সন্তানের কোনও খোঁজ মিলল না আজও। দুজনকেই কেড়ে নিয়েছে শতাব্দীর অন্যতম ভয়ঙ্কর করমণ্ডল ট্রেন দুর্ঘটনা।

Coromandel Express Accident : করমণ্ডলে চেপে ভিন রাজ্যে যাওয়ার প্ল্যান! দুর্ঘটনার ১৫ দিন পরও নিখোঁজ দুই বন্ধু
অসহায় পিতা মাতার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কাকদ্বীপ মধুসূদনপুর এলাকার বাসিন্দা। সম্বল বলতে ছিল দুই ছেলে। এক ছেলেকে জন্ম দিয়েছেন আরেকজনকে লালিত পালিত করেছেন ছোট থেকেই। দুই ছেলেকেই হারাতে হয়েছে ওই দুর্ঘটনায়। তবে একজনের দেহ মিললেও পালিত ছেলের দেহ মেলেনি আজও। অপেক্ষায় আজও চোখে জল বাবা মায়ের।

Coromandel Express Accident: পাতার শিরা-উপশিরায় &amp#39;করমণ্ডল বিপর্যয়&amp#39;, ফুটে উঠল শিল্পীর কাঁচির ছোঁয়ায়
মইজুদ্দিন এবং জামাল দুই ছেলে ছিল তাঁদের। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই বাহানাগা ছুটে গিয়েছিলেন ওই দম্পতি। অনেক খুঁজে পান মইজুদ্দিনের দেহ। কিন্তু, খুঁজে পাওয়া যায়নি জামালের দেহ। গোটা তল্লাট খুঁজেও জামালের কোনও খোঁজ মেলেনি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকেই অনেকের মৃত্যু হয় সেদিনের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায়। অনেকেরই দেহ ফিরে আসে দীর্ঘদিন পর। কিন্তু, জামালের কোনও চিহ্ন আজও পায়নি তাঁরা।

Coromandel Express Accident : মর্গে ভাঙল ভুল, কাকদ্বীপে পৌঁছল রেল দুর্ঘটনায় মৃত বিহারের বাসিন্দার দেহ
দম্পতি আজ থেকে ৩০ বছর আগে জামালকে হাওড়া স্টেশন থেকে উদ্ধার করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল আট বছর। এরপর দুই ছেলেকে সস্নেহে বড় করে তোলেন ওই দম্পতি। দুজনেই তাঁদের বৃদ্ধ বয়সের সম্বল ছিল। দম্পতির কথায়, জামাল গুজরাটে একটি কাজ করত। পরে নিজেদের রাজ্যে ফিরেও কিছুদিন কাজ করে। এরপর চেন্নাই থেকে একটি কাজের সুযোগ আসে।

Coromandel Express News: এখনও মেলেনি হদিশ, ছেলেদের অপক্ষায় দুই পরিবার

মইজুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে চেন্নাই যাত্রা শুরু করে জামাল। সেই শেষ যাত্রা। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় মইজুদ্দিনের। দেহ পায় পরিবার। কিন্তু, জামাল? তার খোঁজের উপায়? ভুবনেশ্বর হাসপাতালে ডিএনএ পরীক্ষা করে অনেকেই প্রিয়জনের দেহ পেয়েছেন। কিন্তু, জামালের জন্য তো সে উপায় নেই। তাই, দেহ ফিরে পাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ।
অসহায় হয়ে বাড়িতে জীবনের শেষ সময়টুকু কাটাচ্ছেন ওই দম্পতি। দুর্ঘটনার দুই মাস কেটে গিয়েছে। আজ ওই লাইন দিয়েই ছুটে চলে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন নিজেদের লক্ষ্যে। জীবন চলছে নিজেদের ছন্দে। কিন্তু, কাকদ্বীপের সইদুল এবং তাঁর স্ত্রী আজও ভাবেন, এই হয়তো তাঁদের জামাল ফেরত আসবে। পালিত তো কি হয়েছে? ছেলে তো ছেলেই!



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *