Kolkata Trending News : আমার সন্তান যেন বেঁচে থাকে চোখে, মৃত ছেলের কর্নিয়া দান করে দুজনের আঁধার ঘোঁচালেন দৃষ্টিহীন বাবা – parents decide to donate two eyes of son who died of scrub typhus in kolkata


এই সময়: সবথেকে ছোট মৃতদেহগুলির ভারই সবথেকে বেশি হয়। আর সেই ভার যদি বইতে হয় বাবা-মাকে? বইলেন হরপ্রসাদ রায় ও তাঁর স্ত্রী দীপশ্রী। কিন্তু মাত্র ১০ বছরের ছেলে হার্দিককে হারানোর এই অন্তহীন শোকেও যেন তাঁরা একরাশ আলো জ্বেলে দিলেন। স্ক্রাব টাইফাসে মৃত ছেলের দু’টি চোখ দান করার সিদ্ধান্ত নিতে বিন্দুমাত্র দেরি করেননি হরপ্রসাদ-দীপশ্রী। আর দেরি করেননি বলেই সেই মরণোত্তর দুই কর্নিয়ায় দৃষ্টি ফিরে পেল দুর্ঘটনায় চোখ হারানো এক বালক ও এক কিশোরী। রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমলোজিতে (আরআইও) কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের পর আপাতত সুস্থ আছে দুই গ্রহীতা। কয়েক দিনের মধ্যে তাদের ছুটিও হয়ে যাবে। তাঁর ছেলের দৃষ্টিতে আবার দুনিয়া দেখবে দু’জন। কিন্তু হরপ্রসাদ নিজে তা দেখতে পারবেন না কোনও দিন। কারণ… হরপ্রসাদ নিজেই দৃষ্টিহীন।

Reels Video : তিলে তিলে রিলের গ্রাসে কৈশোর!
গত রবিবার সল্টলেক লাগোয়া বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায় ওডিশার রৌরকেলার হার্দিক (১০)। তার বাবা হরপ্রসাদ রৌরকেলার একটি কলেজের অধ্যাপক। লেক টাউনে মামার বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়া হার্দিককে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। গত রবিবার সে মারা যায়। একমাত্র সন্তানের মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে যান রায় দম্পতি। স্ত্রী দীপশ্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ছেলের চক্ষুদানের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি হরপ্রসাদ। সেই মরণোত্তর কর্নিয়া দু’টি মঙ্গলবার প্রতিস্থাপিত হয় আরআইও-তে চিকিৎসাধীন দুই শিশুর চোখে। একজন মালদার বৈষ্ণবনগরের ক্লাস সেভেনের কিশোরী শেফালি মণ্ডল, অন্যজন বীরভূমের পাড়ুইয়ের ক্লাস ফোরের বালক শামিম মীর।

Coromandel Express Accident : পালিত ছেলের ডিএন‌এ পরীক্ষা সম্ভব নয়, করমণ্ডল দুর্ঘটনায় হতের দেহ ফেরাতে হন্যে পরিবার
আরআইও সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর গাছে উঠে আম পাড়তে গিয়ে মৌমাছির চাকে হাত দিয়ে ফেলে শেফালি। ডান চোখে হুল ফোটায় মৌমাছি। গাছ থেকে পড়ে যায় সে। পরে চোখ থেকে হুল বেরোলেও ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি চলে যায় তার। শামিমও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গত বছরেই। ব্যাটারি নিয়ে খেলতে গিয়ে তারের সঙ্গে বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে ফেলেছিল। সশব্দে ফেটে ব্যাটারির অংশ বাঁ চোখে বিঁধে যায়। ব্যাটারির সেই অংশ চোখ থেকে বের হলেও দৃষ্টিশক্তি চলে যায় কয়েক দিন পরে। দু’জনেই চিকিৎসাধীন ছিল আরআইও-তে।

India National Cricket Team: চালাতেন অটো, ম্যাগিতেই মিটত খিদে! চেনেন ভারতের এই ‘কোটিপতি’ ক্রিকেটারকে?
তারা এখন দেখতে পাচ্ছে জেনে শোকের মধ্যেও কোথাও যেন এক অনাবিল সান্ত্বনা পাচ্ছেন রায় দম্পতি। তাঁরা জানাচ্ছেন, বাবাকে দৃষ্টিহীন দেখে হার্দিক ছোট বয়সেই বরাবর মরণোত্তর চক্ষুদানে আগ্রহী ছিল। তাই অসময়ে সকলকে শূন্য করে সে না-ফেরার দেশে চলে গেলেও, তার ছোট্ট অঙ্গীকার ভোলেননি তার মা-বাবা। যে চিকিৎসকের অধীনে এই প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার হয়েছে, সেই চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ আশিস মজুমদার জানাচ্ছেন, আগেও বহু কর্নিয়া প্রতিস্থাপন হয়েছে আরআইও-তে। কিন্তু মৃতের নিকটাত্মীয়ের এমন মহৎ মনোভাব আগে দেখেননি তাঁরা।

Buddhadeb Bhattacharya Health Condition : রাজ্য রাজনীতিতে আর বিশেষ আগ্রহ নেই! ছোট্ট ফ্ল্যাটে কী ভাবে দিন কাটে বুদ্ধবাবুর?
রায় দম্পতিকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ওই দুই কর্নিয়া গ্রহীতা শেফালি ও শামিমের পরিবারও। আরআইও-র অধিকর্তা অসীম ঘোষ বলেন, ‘নেত্রদান তো মহৎ দান। কিন্তু এত ছোট সন্তান হারানোর পর ওই ভয়াবহ শোকের আবহেও চক্ষুদান করার মতো মানসিক অবস্থায় সকলে থাকে না। তখনও লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন ওরা! কোনও ধন্যবাদই যথেষ্ট নয়।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *