কিছুদিন আগে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্কুলে ক্লাস-পিছু ১৫০ টাকায় শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল। তারও আগে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পিছু ৩০০ টাকা বেতনে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ঘিরেও বিতর্ক তৈরি হয়। এ বার যাদবপুর।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্থ সেন্টারের জন্যে একজন করে চক্ষু বিশেষজ্ঞ, ইএনটি বিশেষজ্ঞ এবং চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া একজন প্যাথলজি টেকনিশিয়ানের নিয়োগেরও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে। ডাক্তারদের নির্দিষ্ট যোগ্যতামানও দেওয়া হয়েছে।
তাঁদের সপ্তাহে তিন দিন দু’ঘণ্টা করে পরিষেবা দিতে হবে। তার জন্যে দৈনিক তাঁরা পাবেন ৭০০ টাকা! অর্থাৎ মাসে ৮৪০০ টাকা। একজন টেকনিশিয়ান মাসে পাবেন ১০ হাজার টাকা। স্পেশালিস্ট ডাক্তারদের জন্যে এই যৎসামান্য বরাদ্দে প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন অনেকেই। চিকিৎসক যোগীরাজ রায়ের বক্তব্য, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক একটি নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তি। চিকিৎসকদের কার্যত অপমান করা হয়েছে। আমাদের ডিগ্রির কি কোনও দাম নেই?’
যোগীরাজের মতে, ‘এর চেয়ে বরং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাতব্যের কথা বলতে পারতেন। তাতে অনেকেই বিনে পয়সায় গিয়ে চিকিৎসা করে আসতে পারতেন।’ অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটার কথায়, ‘নিট ইউজি পরীক্ষার মতো ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতায় সফল হয়ে, সাড়ে পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্স। বিশেষজ্ঞ হতে গেলে আবারও নিট-পিজি ক্র্যাক করে তিন বছরের এমডি, এমএস কোর্স এবং তিন বছরের কম্পালসারি বন্ড সার্ভিস করতে হয়। তার পরেও পাঁচ বছর কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চুক্তি-চাকরির মাইনে ঘণ্টায় ৩৫০ টাকা? এ লজ্জা রাখব কোথায়?’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য মেনে নিচ্ছেন এই বেতন অত্যন্ত কম। কিন্তু তাঁদের দাবি, হাত-পা বাঁধা। রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু জানান, তাঁরা চেয়েছিলেন দিনে অন্তত ১৫০০ টাকা বেতনে এই নিয়োগ হোক। সেই মতো প্রস্তাবও জমা করা হয়েছিল।
কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নেই। ভিসি থাকাকালীনও রাজ্যপালের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর আর্থিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ছিল না। অনেক দিন ক্যাম্পাসে কর্মসমিতিরও বৈঠক হয়নি। ফলে চেষ্টা করেও ‘রিভাইসড রেট’ কার্যকরী করা যায়নি।