পার্ক স্ট্রিট হোক বা রাসবিহারী মোড়, শ্যামবাজার হোক বা রুবি মোড়—বিভিন্ন রুটের কয়েকশো যাত্রী চিন্তিত মুখে ঘন ঘন ঘড়ি দেখতে থাকেন আর অন্তত একটা বাস বা ট্যাক্সি পাওয়ার আশায় আকুল প্রার্থনা করেন এখন প্রতি রাতেই। মাঝরাত হলেও বাড়ি ফেরার ভাবনা নেই, মহানগরে রাত ১২টাতেও একটা না একটা বাস ঠিক পাওয়া যায়–এমন একটা ভরসায় বহু বছর কাটিয়েছেন মানুষজন।
যদি বাস নিতান্তই না পাওয়া যায়, তা হলে ট্যাক্সি—অন্তত একটা শাটল ট্যাক্সি তো পাওয়াই যেত এতদিন। যেত। এখন আর যায় না। শহরের নিরিখে যাকে ভরসন্ধ্যা বলে মনে করা হতো, সেই রাত দশটা-সাড়ে দশটাই এখন গভীর রাতের সমতুল্য। শহরের পথে বাস বাড়ন্ত। উধাও ট্যাক্সিও। ফলে শহরবাসীকে আত্মীয়-বন্ধুর বাড়ি গেলেও ঘন-ঘন ঘড়ি দেখতে হয় শুধুমাত্র বাস-ট্যাক্সির অভাবের কথা ভেবে।
জবাবে বেসরকারি বাস ও মিনিবাস মালিকদের সংগঠন অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘শহরের জীবনযাত্রার ধরনটা আমূল বদলে গেল ২০২০-তে করোনার সময় থেকে। যাত্রীদের বড় অংশ যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফিরতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমরা দেখলাম রাত ন’টার পর যাত্রীর সংখ্যা এত কমে যাচ্ছে যে বাস চালিয়ে খরচ তোলা যাচ্ছে না। ফলে সেই অনুপাতে বাসের সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে।’
যাত্রী যদি কমেই যায় তা হলে বিভিন্ন জায়গায় এত যাত্রী দেখা যায় কী করে? জবাবে বেসরকারি বাসমালিকরা বলছেন, কোথাও ৫০ জন যাত্রী রয়েছেন ঠিকই, কিন্তু দেখা যাবে ওই জায়গায় অনেক রুটের বাস চলে। দেখা যাবে একটা বাসে চার-পাঁচ জন যাত্রী উঠলেন। এতে তেলের খরচ ওঠে না। কত কমেছে বেসরকারি বাস ও মিনিবাস?
বাসমালিকের দল জানাচ্ছেন, শহরে দিনে গড়ে সাড়ে তিন হাজার বাস ও ৫০০-র কাছাকাছি মিনিবাস চলে। এর মধ্যে সকাল আটটা থেকে ১১টা এবং বিকেল তিনটে থেকে সাতটায় সবচেয়ে বেশি বাস চলে। দুপুরে ১২টা থেকে অর্থাৎ অফিস টাইম পার হলে বাসের সংখ্যা কমতে শুরু করে। রাত আটটা থেকে ন’টার মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ বাস বন্ধ হয়ে যায়। ন’টা বেজে গেলে খুব বেশি হলে ৩০ শতাংশ বাস চলে। ১১টার পর বাস পাওয়া লটারি পাওয়ার মতোই।
একই কথা বলা যায় ট্যাক্সি এবং অনলাইন অ্যাপ ক্যাব নিয়েও। বছরখানেক আগেও শাটল ট্যাক্সিতে ১৫-২০ টাকা ভাড়া দিতেন যাঁরা, তাঁদেরই এখন ১০০ টাকা গুনতে হয়। অনলাইন ক্যাবচালকদের সংগঠন অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘২০১৯-এ শহরে অন্তত ২০ হাজার ক্যাব ও ট্যাক্সি চলত। এখন সেই সংখ্যা কমতে কমতে আট হাজারে নেমেছে। যাত্রীর সংখ্যা যে সময়ে কমে যায়, ওঁরাও সেই সময় আর গাড়ি চালান না। পার্ক স্ট্রিট, টালিগঞ্জ, শ্যামবাজার ইত্যাদি যে জায়গায় যাত্রীর ভিড় থাকে, ওঁরা চেষ্টা করেন সেই জায়গার কাছাকাছি থাকতে। অনেকেই বাড়ির দিকে ভাড়া পেলে যাত্রী নেন, না হলে রাইড ক্যানসেল করেন।’