হরিদেবপুরের নবপল্লীর রবীন্দ্রনাথ টেগর রোডে তিনতলা বাড়ির একেবারের উপরের তলায় থাকে সরকার পরিবার। দু’টি তলা ভাড়া দেওয়া রয়েছে। বিকেল হলেই সটান তিন তলা থেকে নীচে নেমে পড়ত সৌরনীল। বাড়ির সামনে সিমেন্টের ৬ ফুটের রাস্তা। সেখানেই বল পেটাত ৮ বছরের খুদে। পাড়ার ছোট্টো বন্ধুরা তাকে নীল বলেই ডাকত। কখনও মাঠে, আবার কখনও রাস্তায় চলত খেলাধুলো। খেলার সময়ে অবশ্য মা দীপিকা সরকারের সব সময়ে নজর থাকত ছেলের উপরে।
গত শুক্রবার সকালে বেহালা চৌরাস্তার মোড়ে লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় সৌরনীলের। সেই ঘটনার আতঙ্ক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি তার
স্কুলের বন্ধুরা। অনেকেই দুর্ঘটনার পর চৌরাস্তার উপরে যে তান্ডবলীলা চলেছে, তার সাক্ষী। শিশুমনে সেই প্রভাবে যে এখনও রয়েছে, তা জানাচ্ছেন অভিভাবকেরা। সে কারণে বড়িশা জুনিয়র স্কুল আপাতত ছুটি দেওয়া হয়েছে।
ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেননি খুদের ক্লাস টিচাররাও। তাঁদের বক্তব্য, ‘সৌরনীলের মতো ফুটফুটে শিশুকে কী ভুলে থাকা যায়? যে ভাবে রাস্তায় ওকে পড়ে থাকতে দেখেছি, তাতে রাতের ঘুম চলে গিয়েছে আমাদের।’ প্রধান শিক্ষক অর্জুন রায় সৌরনীলের মৃত্যুর জন্য পুলিশকেই সরাসরি দায়ী করেন। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালেও তাঁকে ভর্তি করতে হয়।
স্কুলের এক বন্ধুর কাছে রয়ে গিয়েছে তার আঁকার খাতা। যত্ন করে সেই বন্ধু রেখে দিয়েছে সৌরনীলের শেষ স্মৃতি। দ্বিতীয় শ্রেণীর ‘এ’ সেকশনে বসত সৌরনীল। রোল নম্বর ২১। এ বছর তার বসার জায়গাটা আপাতত ফাঁকা থাকবে। পাশে বসা বন্ধুরা জেনে গিয়েছে সৌরনীল আর ফিরবে না।