আত্মীয় অমিত কর্মকার বলেন, ‘পাশাপাশি বাড়ি। তবে গত একমাস ধরে কোনও দোকান-বাজারের মতো কোনও দৈনন্দিন কাজকর্ম নজরে পড়ছিল না ওঁদের। আমাদের বাড়ি থেকে খাবার পাঠালে ছুঁয়েও দেখত না। বাজার পাঠালে ওই ভাবেই ফেলে রাখত। বাড়িতেও ঢুকতে দিত না কাউকে।’ দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করায় সন্দেহ বাড়ছিল অমিতের। প্রতিবেশীদেরও মনে হয়েছিল, ফের গত বছরের মতোই কিছু হয়েছে। শেষমেষ রবিবার এলাকার কাউন্সিলার তারকনাথ দাসকে সন্দেহের কথা জানান অমিত। কোতোয়ালি থানায় খবর যায়। পুলিশ এসে ঘরে ঢুকে দেখতে পান বাথরুমের ভিতর পড়ে রয়েছে অঞ্জলি কর্মকার (৬৮)-এর মৃতদেহ। ঘরের এক কোনায় বসে রয়েছেন মেয়ে অনিন্দিতা।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পাঁচ দিন আগেই মৃত্যু হয়েছে অঞ্জলির। মায়ের মৃত্যুসংবাদ কাউকে না জানিয়ে রাতের পর রাত নীরবে কাটিয়েছেন মেয়ে অনিন্দিতা। ঠিক যেমনটা গত বছর একসঙ্গে কাটিয়েছিলেন মা ও মেয়ে। গত বছর ১৯ অগস্ট কলেজপাড়ার এই বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অজিত কর্মকার (৮০)-এর পচাগলা মৃতদেহ। বাড়িতে স্ত্রী অঞ্জলি ও মেয়ে অনিন্দিতাকে নিয়ে থাকতেন অজিতবাবু। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের দাবি, কারও সঙ্গে মেলামেশা করতেন না ওই পরিবারের সদস্যরা।
এলাকার কাউন্সিলার তারকনাথ দাস বলেন, ‘গত বছরও ওই বাড়ি থেকে প্রবল দুর্গন্ধ বের হওয়ায় প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দিয়েছিলেন। পুলিশ এসে দেখতে পায়, মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন অজিতবাবু। প্রথমে খুন বলে সন্দেহ হলেও পরে পুলিশ জানায়, স্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা। ওই ঘটনার পর অনিন্দিতার মানসিক অসুস্থতার বিষয়টি জানাজানি হয়। আত্মীয় এবং প্রতিবেশীরাই উদ্যোগ নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করান। সেই সময় খানিক সুস্থ হয়ে উঠলেও এর মধ্যে তিনি যে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তা আঁচ করতে পারেননি কেউই।’
কাউন্সিলার তারকনাথ দাস বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে অসুস্থতা আরও বেড়েছে। তাই দ্রুত যাতে কোথাও রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়, সে চেষ্টা করব।’ কোতোয়ালি থানার আইসি অর্ঘ্য সরকার বলেন, ‘স্বাভাবিক মৃত্যু বলেই মনে হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।’