‘যে যাই বলুক, বাংলায় থাকতে গেলে বাংলা ভাষাটা জানতেই হবে’if anyone wants to reside in west bengal he or she should know Bengali Language


ডা. অরিন্দম বিশ্বাস 

কিছুদিন আগেই একটা খবর দেখা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে বাধ্যতামূলক হতে পারে রাজ্যের ভাষা তথা বাংলা ভাষা। ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়গুলিতে বাংলা পড়ানো বাধ্যতামূলক করতে চলেছে সরকার। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বেসরকারি বিদ্যালয়গুলির জন্য এ সংক্রান্ত গাইডলাইনও তৈরি হবে। জানা গিয়েছে, বাংলা এবং ইংরেজি পড়াতেই হবে। তৃতীয় ভাষা হিসেবে যে অঞ্চলে যে ভাষার কার্যকরিতা বেশি, সেই অঞ্চলে সেই ভাষা পড়া যাবে– সেটা হিন্দিও হতে পারে, সাঁওতালিও হতে পারে। রাজ্য মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাজ্যে থাকা সমস্ত ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে হয়তো শীঘ্রই প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এটা দরকার ছিল। খুবই জরুরি বিষয়। এখন আমরা তাকিয়ে আছি, কত দ্রুত এটা আইন হিসেবে এসে কাজে পরিণত হয়।

আরও পড়ুন; অফবিট তেপান্তর! এই বর্ষায় হাত বাড়ালেই মেঘ-মাখানো বনপাহাড়ির দেশ পাসাবং...

এই খবরে আমরা খুশি হয়েছি এবং অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি কারণ, দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই চলছে আমাদের। আমাদের দাবিগুলির অন্যতম– শিক্ষাক্ষেত্রে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে বাংলা পড়ানো বাধ্যতামূলক করতে হবে, পাঠ্যক্রমে বাংলার ইতিহাস ও মনীষীদের জীবনী রাখতে হবে, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বাংলাভাষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

অথচ এই অগ্রাধিকার দেওয়ার কাজটা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। আমরা দেখেছি, বাংলায় চাকরি আছে, কিন্তু বাঙালির চাকরি নেই। বাংলা ভাষাটা চলে যাচ্ছে একেবারে শেষ প্রান্তে। বাংলা ভাষা-সাহিত্যের প্রাচুর্য আমরা প্রতিদিনই ভুলে যাচ্ছি। এটার পরিবর্তন চাই আমরা। 

এর মানে এই নয় যে, আমরা ইংরেজিভাষার বিরোধী। ইংরেজিকে আমরা বাতিল করিনি। ইংরেজি এ রাজ্যে কমিউনিকেটিং ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে থাকুক। কিন্তু বাঙালিদের উপর জোর করে কোনও ভাষা চাপানোর বিরুদ্ধে আমরা।

মনে করে দেখুন, আমাদের ছোটবেলায় স্কুলে আমরা যা খুশি তাই টিফিন নিয়ে যেতে পারতাম। কেউ আমাদের বলে দেয়নি, টিফিনে এটাই খেতে হবে আর এটা খেতে পারবে না। এটা তখন ছিল না। এখন কিন্তু সেসবও হচ্ছে। বাঙালির নিজস্ব খাদ্যসংস্কৃতির উপরও চাপ আসছে। এই চাপটা আমরা অপছন্দ করছি।

বেশ কিছু স্কুলে তো বাংলায় কথাও বলা চলে না। সেখানে ইংরেজি বলা বাধ্যতামূলক। কেন এটা হবে? বাংলার বুকের কোনও স্কুলে একজন পড়ুয়া বাংলা বলতে পারবে না? বাংলার বুকের কোনও স্কুলে একজন শিক্ষক বাংলা ভাষাটা বলতে জানবেন না? অবাঙালি শিক্ষকদের বাংলাটা জানতে হবে। পাশাপাশি, এ রাজ্যের অবাঙালিদের বাংলা জানাটা দরকার বলেই আমরা মনে করি। এ রাজ্যে প্রচুর অবাঙালি বাংলা না জেনে বসবাস করছেন। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার– বাংলায় থাকতে গেলে বাংলাটা তোমায় জানতেই হবে। না হলে তোমরা যেখানে নিজেদের ভাষা উচ্চারণ করে ভালো থাকো সেখানে চলে যাও। আমরা এবার দেখব, বাংলার এই নতুন নিয়মের সূত্রে এই ব্যাপারগুলিতে কত তাড়াতাড়ি ইতিবাচক বদল আসে। 

বাঙালির রাজনীতিক্ষেত্রে এবং ব্যবসাক্ষেত্রেও বিপুলভাবে অবাঙালিদের প্রবেশ ঘটেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের নাম শুনে মনে হয়, আমরা যেন বিহারে বাস করছি! আমাদের রাজনীতিতে উঠে আসছে যাদব-তিওয়ারির মতো পদবিধারী সব ব্যক্তি! ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির মাথাতেও থাকছেন ওইরকম পদবিধারী কোনও না কোনও ব্যক্তি। এ রাজ্যে বাংলা ভাষাটা বাধ্যতামূলক হলে এটাতেও তখন পরিবর্তন আসবে। বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক হলে বাঙালিদের জন্য চাকরির ক্ষেত্রটাও বিস্তৃত হবে। আমরা আসলে বাংলার বাঙালিদের জন্য একটু স্বার্থপর হতে চাই। পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষার গুরুত্ব বাড়লেই চাকরির ক্ষেত্রেও বাংলার গুরুত্ব বাড়বে। বাঙালির গুরুত্ব বাড়বে।

আরও পড়ুন; Rabindranath Tagore Death Anniversary: বাইশে শ্রাবণে মৃত্যু হয়নি রবীন্দ্রনাথের! কেন জানেন?

বাংলা ভাষাটা বাংলাতেই কত পিছিয়ে পড়েছে! আমরা চাই, সর্বত্র বাংলা ফিরুক। সমস্ত পোস্টারে, হোর্ডিংয়ে বাংলা ফিরুক, সরকারি ক্ষেত্রে সিভিল সার্ভিসে বাংলা বাধ্যতামূলক হোক। আমরা এমনকি চাইব, প্রেসক্রিপশনে বা নিদানপত্রেও আসুক বাংলাভাষা। মানে, এবার থেকে প্রেসক্রিপশন লেখা হোক বাংলায়।

অথচ এ রাজ্যে কোনও রাজনৈতিক দলই বাংলাভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দিকটায় কখনওই সেভাবে নজর দেয়নি। বামশাসনে এটা বিশেষ করে ঘটেছে। তারা রাজ্যের বাইরে, দেশের বাইরে এত বেশি ফোকাস করেছে, অন্য দেশের ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে এত বেশি প্রাণিত থেকেছে যে, নিজের ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি নজর দিতেই ভুলে গিয়েছে। 

(লেখক বিশিষ্ট চিকিৎসক, জাতীয় বাংলা পরিষদের সভাপতি)

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

(এই প্রবন্ধের মতামত লেখকের নিজস্ব। এর সঙ্গে ‘জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো’র সম্পাদকীয় বিভাগের কোনও যোগাযোগ নেই। )





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *