এক বিবৃতিতে জুটা জানাচ্ছে, ‘গভীর দুঃখ ও লজ্জার সঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জানাচ্ছি যে গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হোস্টেল এর এ২ ব্লকে একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। প্রথম বর্ষের একজন ছাত্রকে ওই ব্লকের নিচে উলঙ্গ এবং অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে সে মারা যায়। জানা গিয়েছে, ঘটনার কিছু আগে সে তার মাকে ফোন করে কান্নাকাটি করে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা সকলে শোকস্তব্ধ। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমরা আমাদের গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি আমরা সুস্পষ্টভাবে দাবি করছি, ১) অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক ও কঠোর শাস্তি দিতে হবে, ২) নুতন ছাত্রদের আলাদা হোস্টেলে রাখতে হবে ইউজিসি নিয়ম মেনে, ৩) অবিলম্বে প্রাক্তন ছাত্র যারা হোস্টেলে বেআইনি ভাবে থাকছে, তাদের হোস্টেল থেকে বের করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
অন্যদিকে এই বিষয়ে শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার বলেন, ‘আমি দৃড়ভাবে বিশ্বাস করি মানুষের যে বর্বরোচিত উল্লাস করার প্রবণতা থাকে, মানুষ যে বিকৃত মনের অধিকারী, তারই প্রমাণ এই ব়্যাগিং। বিকৃত কামনা, বিকৃত উল্লাস, বিকৃত ভাবনা এইসবের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পায়। আইন করে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব়্যাগিং নামক বিষয়টিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হোক, নিষিদ্ধ করা হোক।’
এই বিষয়ে নিজের ব্যক্তিগত মতামতও তুলে ধরেন মীরাতুন নাহার। উত্থাপন করেন বাবা-মায়েদের ভূমিকার কথাও। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তান যদি এই কাজে যুক্ত থাকত, আমি নিজে তাকে আদালতে নিয়ে গিয়ে বলতাম, এর যেন বিচার হয়। আমার ব্যক্তিগত মতামতা, আমার সন্তান করলে বলতাম যে ভাবে শাস্তি দিলে এই অন্যায়ের বিহিত হয় সেটাই হোক।’ তিনি মনে করেন, যাঁরা ব়্যাগিংয়ের শিকার হন, তাঁদের বেশিরভাগই, তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষ। খুব লড়াই করে কলকাতায় পড়াশোনা করতে আসেন তাঁরা। তাই সেইদিক থেকে দেখলেও এটি খারাপ বিষয় বলে মনে করেন তিনি।
এর আগেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উঠেছে ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ। সেক্ষেত্রে অনেকেরই প্রশ্ন, এভাবে আর কতদিন? এই অবস্থার কি কোনও পরিবর্তন নেই? এই বিষয়ে শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, ‘সেই প্রশ্নটা আমারও, পরিবর্তন তো হওয়া উচিত। যাদবপুর যথেষ্ট সতর্কতা নেয়। তবুও ব়্যাগিং আকস্মিকভাবে হয়ে যায়। এটা অন্যায় এবং এটা হওয়া উচিত নয়। শাস্তি হওয়া হওয়া উচিত।’
প্রসঙ্গত, নদিয়ার বগুলা কলেজ পাড়া উত্তরের বাসিন্দা স্বপ্নদ্বীপ কুণ্ডু পড়াশোনার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। মাত্র একসপ্তাহ আগে কলকাতায় এসে যাদবপুরে ভর্তি হন তিনি। এরপর বুধবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ যাদবপুর মেইন হস্টেল ক্যাম্পাস থেকে সম্পূর্ণ নগ্ন ও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় স্বপ্নদীপকে। তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে কেপিসি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই বৃহস্পতিবার ভোরে মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা ক্যাম্পাসে।