দু’দিনে তিনবার ‘ইন্ট্রো’ স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর। ইন্ট্রোর নামে চলে অকথ্য অত্যাচার, র্যাগিং। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ভাইরাল পড়ুয়াদের একটি হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বপ্নদীপের এক সহপাঠী সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন যে কীভাবে র্যাগিং করা হত হস্টেলে। এবিপি আনন্দকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের বয়ান অনুযায়ী, র্যাগিং যাদবপুরে ওপেন সিক্রেট। হস্টেলে সিসিটিভি না থাকার সুবিধা নিয়ে মদ, গাঁজা, মাদকের আসর বসাতেন সিনিয়রেরা। জুনিয়রদের সঙ্গে দাসের থেকেও খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ। তাদের বড়চুল বা দাড়ি রাখার পারমিশন ছিল না। এমনকী ফোনে নিজের ঘর ছাড়া কথা বলার সুযোগ ছিল না। ফরমায়েশ মতো সিনিয়রদের জন্য মদ, খাবার, সিগারেট এনে দিতে হত।
প্রথম বর্ষের ওই আতঙ্কিত ছাত্র জানান, স্বপ্নদীপের সঙ্গে তাঁকেও একদিন ইন্ট্রোতে ডাকা হয়েছিল। একইসঙ্গে জানান, রাত ১১টা থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটা অবধি জাগিয়ে কী করানো হত। যাদবপুরের ওই আবাসিক ছাত্র জানিয়েছে, হস্টেলে একটা অদ্ভুত নিয়ম আছে, সিনিয়র-রা কেউ নাম বলতেন না, তাদের নাম ও রুম নম্বর জেনে নিয়ে ডেকে পাঠালে হাজির হতে হত।
র্যাগিংয়ের শিকার প্রথম বর্ষের ওই ছাত্র বলেন, আমাকে রাতে রুমে ডেকে বিয়ারের খালি বোতল দিয়ে ফ্রিজের জল ভরে আনতে বলা হয়। ঘরে ঢুকতেই চলে অকথ্য গালাগাল। আমি জল ভরে আনতেই হাতে বিয়ারের বোতল ধরা অবস্থায় ছবি তুলে নিয়ে এক সিনিয়র বলে কথা মতো কাজ না করলে ফেসবুকে পোস্ট করে দেবে ওই ছবি। ওখানে রাম খাচ্ছিলেন কয়েকজন সিনিয়র। এরপর গাঁজার প্যাকেট খুলে গাঁজা পাতা বাছতে বলা হয়। আমি করতে না চাইলে অকথ্য গালাগাল আর যা চলে তা মনে করলেও কাঁপছি। অনিচ্ছায় গাঁজা পাতা বাছতে বসি। মাঝে খাবার আনতে পাঠানো হয়। হস্টেলের ৭৯ নম্বর ঘর মানে যমের দুয়ার। খাবার নিয়ে ফিরলে আমাকেও মদ খেতে জোর করা হয়। বলা হয় না খেলে মাথায় ঢেলে দেবে।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর এক সহপাঠীর চ্যাট। সেই চ্যাটের সত্যতা খতিয়ে দেখেনি এই সময় ডিজিটাল। সেই চ্যাট অনুযায়ী, হস্টেলের প্রথম রাতেই র্যাগিংয়ের শিকার হন স্বপ্নদীপ। রোজ রাত ১০ থেকে পাঁচটা অবধি চলত অকথ্য অত্যাচার। চ্যাটের বয়ানে লেখা, তাঁর গোলগাল গড়নের জন্য তাঁকে সমপ্রেমী বলে ক্ষ্যাপানো হত। চ্যাটে বিস্ফোরক দাবি,’ঘটনার দিন স্বপ্নদীপকে জামা কাপড় খুলে শুধু গামছা পরে দাঁড়িয়ে তাঁর পুরুষাঙ্গ উত্থিত করতে বলা হয়েছিল। চাপের মুখে ছেলেটি তাই করে। কিন্তু তারপরও সিনিয়রদের হাসাহাসি বন্ধ হয়নি। এরপরই সে সহ্য করতে না পেরে ঝাঁপ দেয়। ‘ চ্যাটের সত্যতা খতিয়ে দেখেনি এই সময় ডিজিটাল। কিন্তু একাধিক আবাসিক ইতিমধ্যেই র্যাগিং নিয়ে মুখ খুলেছেন। উল্লেখ্য, স্বপ্নদীপ কুণ্ডু ঝাঁপ দেওয়ার পর তাঁর দেহ মিলেছিল সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায়।