Jadavpur University News : অতীতে র‍্যাগড কি দুই ধৃতও? দাবি ঘিরে ধন্দ – two students who were arrested on charges of ragging were also victims in jadavpur university


এই সময়: আজ যে শিকার, কাল কি সেই-ই শিকারি? যাদবপুরের প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে আরও যে দু’জন পড়ুয়া রবিবার গ্রেপ্তার হলেন, তাঁদের সম্পর্কে যেন খানিকটা এমন তত্ত্বই উঠে আসছে। ধৃত মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্ত সদ্য প্রথম বর্ষ পাশ করে দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছেন। মাত্র দিন তিনেক তাঁদের ক্লাস শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোতোষের বন্ধুদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, কয়েক মাস আগে মনোতোষ নিজেই তাঁদের কাছে হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন।

JU Student Death: প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুতে র‌্যাগিংই কারণ? যাদবপুরের অধ্যাপকের পোস্টে চাঞ্চল্য
জানিয়েছিলেন, তিনি হস্টেল সিনিয়রদের র‍্যাগিংয়ের শিকার। আরও এক ধৃত দীপশেখরের আইনজীবীর দাবি, তাঁর মক্কেলও অতীতে র‍্যাগড হয়েছেন। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, দুজনেই যদি র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়ে থাকেন তাহলে প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা হস্টেলে পা রাখতে না রাখতে সেই তাঁরাই কীভাবে র‍্যাগিংয়ে যুক্ত হয়ে পড়লেন? এ কেমন চেন, যা ভাঙা যায় না?

Jadavpur University : হস্টেলের বাপই শেষ কথা বলে! জুনিয়ররা যেন প্রজা
প্রথম ধৃত সৌরভ চৌধুরীকে জেরা করে যে দুই পড়ুয়াকে এ দিন পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, তাদের নাম-ফোন নম্বর দিয়ে ছাত্র সংগঠন ফ্যাসের তরফে ক’দিন আগে হেল্পডেস্ক দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, যাদবপুরে ভর্তি হতে এসে যদি কোনও নবাগতর অসুবিধে হয়, তাহলে হেল্প করবেন এই পড়ুয়ারা। কিন্তু যাঁদের রক্ষক হওয়ার কথা ছিল, তাঁরাই কীভাবে ভক্ষক হলেন, তা নিয়ে অনেকেই বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন।

Jadavpur University News: যাদবপুরে কীভাবে চলত ‘ব়্যাগিং’? মুখ খুললেন স্বপ্নদীপের সহপাঠী
অর্থনীতির পড়ুয়া দীপশেখরের আইনজীবী রবিবার আদালতে বলেন, ‘ধৃত সৌরভ চৌধুরীকে সিনিয়র এবং দাদা হিসাবে চিনতেন দীপশেখররা। এ ছাড়া ওঁর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। এক বছর আগে আমার মক্কেলও (দীপশেখর) একই ভাবে র‌্যাগড হয়েছেন। দীপশেখর নিজেও ভিক্টিম।’ দীপশেখরের মা সঙ্গীতা দত্ত বলেন, ‘আমার ছেলেকেও র‍্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়েছে। তাঁর উপর দিয়েও অনেক কিছু গিয়েছে। কিন্তু বাবা অসুস্থ বলে ছেলে কখনও বাড়িতে সে কথা জানায়নি। আমরা আত্মীয় মারফৎ তা জেনেছি। ওই ছেলেটিকে (মৃত ছাত্র) আমার ছেলে খুব পছন্দ করত। ছেলেটি সব সময়ে ভয়ে ভয়ে থাকত। দীপশেখর ওকে বোঝাত। বলেছিল, তুই একদম চিন্তা করিস না, আমি তোর পাশে আছি।’

Jadavpur University Student Death: ‘ফোনে বলেছিল অনেক কিছু বলার আছে…’, যাদবপুরে ছাত্রের রহস্যমৃত্যুতে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ পরিবারের
সমাজতত্ত্বের পড়ুয়া মনোতোষের এক বান্ধবীর কথায়, ‘আমার তো ভাবতেই অবাক লাগছে এই মনোতোষ কয়েক মাস আগেও নিজে র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিল। তা নিয়ে ও নিজেই অত্যন্ত ডিপ্রেশনের মধ্যে চলে গিয়েছিল।’ মনোতোষের বাবা শান্তিনাথ ঘোষ যদিও জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে যে র‍্যাগিংয়ের শিকার এমন কথা আগে কখনও সে বলেনি। পড়াশোনা না-জানা শান্তিনাথ সস্ত্রীক ফাস্ট ফুডের একটি দোকান চালান।

JU Student Death Case: কী হয়েছিল ওই দিন সন্ধেয়? মুখ খুললেন স্বপ্নদীপের ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ সহপাঠী
আর্থিক ভাবে সচ্ছল নয় ওই পরিবার। অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া, দরমার বেড়ায় মাটি লেপা ঘরে বসবাস তাঁদের। খুব কষ্ট করে ছেলেকে পড়াচ্ছেন। শান্তিনাথের কথায়, ‘বেড পায়নি বলে হস্টেলে ওই ছেলেটি একদিন চারতলায় আমার ছেলের রুমে ছিল। পর দিন তাকে তিনতলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শনিবারই ফোনে কথা বলার সময়ে আমার ছেলে সে কথা জানিয়েছিল। আর আজ শুনছি, আমার ছেলেকেই পুলিশ ধরেছে।’

অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ এখন বিচারাধীন। তবে মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের কথায়, ‘যাঁরা র‍্যাগিংয়ের শিকার হন, তাঁদের মধ্যে একটা ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। বোঝানো হয় দেখ তুমি কত ছোট, কত ক্ষমতাহীন। কিন্তু এক মাঘে তো শীত যাবে না, তাই শিকারই যখন সুযোগ পান, তখন তাঁরা শিকারি হয়ে ওঠেন।

Jadavpur University News : ‘… সারল্যটাকেই মেরে ফেললাম আমরা’, স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন কাফিদা
দুর্বলের উপর অত্যাচার করে প্রতিশোধের সুখ পাওয়ার আনন্দ যেন নেশার মতো চেপে বসে।’ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুকন্যা সর্বাধিকারী একে খো খো খেলার সঙ্গে তুলনা করেছেন। খো খো খেলায় যেমন একজনের পিঠে এসে চাঁটি মারলে অপরজনকে চাঁটি মারাটাই খেলার নিয়ম, সেই চেনেই র‍্যাগিং, বুলিং, হেনস্থা, গ্রার্হস্থ্য হিংসার ঘটনার পরম্পরা চলতেই থাকে। সুকন্যার সংযোজন, ‘দলবদ্ধ অপরাধে সামাজিক ও ন্যায়বোধগুলি হাল্কা হতে শুরু করে। ব্যক্তিগত স্তরে হয়তো এরা কেউই বীরপুঙ্গব নন, কিন্তু সেই মানুষটাই দলে পড়ে অনেক ভয়াবহ ঘটনা চাইলে ঘটাতে পারে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *