ফেসবুকের ভি বি কনফেশন্স নামের ওই পেজটি পড়ুয়ারা নিজেদের মধ্যে হাসি মস্করার জন্যই বানিয়েছেন। এই গ্রুপে পরিচয় গোপন রেখে নিজেদের মনে কথা বলেন। বেশিরভাগই থাকে হাসি মস্করা বা প্রেমের স্বীকারোক্তি। কিন্তু ১১ অগাস্টের একটি পোস্টে। তাতে বিশ্বভারতীর সংগীত ভবনের স্নাতকোত্তরের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী তাঁর নিদারুণ যন্ত্রণার কথা লিখেছেন। পোস্টটিতে লেখা, প্রিয়,
শান্তিনিকেতন, এখানে পড়তে এসেছিলাম অনেক স্বপ্ন নিয়ে কিন্তু আর টিকতে পারছি না। শারীরিক আর মানসিক দু’দিক দিয়েই শিকার হয়ে যাচ্ছি। ভয়ে মুখ খুলতে পারি না, আজকে বাধ্য হয়ে এখানেই লিখলাম। গ্র্যাজুয়েশনের সেকেন্ড ইয়ার থেকে শারীরিক ভাবে কয়েকজন পশুর ন্যায় শিক্ষকের শিকার আমি। কোনওদিন বলতে পারিনি আজকে বলতে বাধ্য হলাম কারণ আর পারছি না। শান্তিনিকেতনে পড়তে আসা আর বিশ্বভারতীতে পড়া আমার জীবনে যেন এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশি দিন হয়তো টিকতে পারব না, মা বাবা আর আমার এক ভাই আছে। এখনও যে বেঁচে আছি, শুধু তাঁদের জন্যই কিন্তু এই শারীরিক নির্যাতন আমায় শেষ করে দিয়েছে।’
বিশ্বভারতীর পড়ুয়ার অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পোস্টে অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে বা পুলিশে এই প্রতিবেদন পাবলিশ হওয়া পর্যন্ত কোনও অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়নি। সম্প্রতি একছাত্রীকে এই একইভাবে মানসিক শারীরিক শোষণের অভিযোগে বিশ্বভারতীর বিনয় ভবনের অধ্যাপক রাজর্ষি রায় গ্রেফতার হন। তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন গবেষিকা এক ছাত্রী। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরও কেলেঙ্কারির অভিযোগ। তিন বছরেরও বেশি সময় শারীরিক-মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ।
তবে উল্লেখ্য, অভিযুক্ত অধ্যাপক ৪৭ দিন জেল হেফাজতে থাকার পর জামিনে মুক্ত হন। কিন্তু অভিযুক্তের কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। গবেষিকা ছাত্রী প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছেই অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তারা কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তখন শান্তিনিকেতন থানার দ্বারস্থ হন ওই ছাত্রী। সংগীত ভবনের আর এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধেও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। সংগীত ভবনের প্রাক্তন ছাত্রী পুলিশে অভিযোগ দায়ের করতেই পলাতক ওই অধ্যাপক। সেই বিষয়টি ঠান্ডা হওয়ার আগেই আবারও সংগীত ভবনে ছাত্রীর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ সামনে আসায় বিশ্বভারতীর পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন পড়ুয়া থেকে অভিভাবকেরা।