Jadavpur University News : ফোন-চিঠি জোড়াসূত্র, তত্ত্ব সেই ষড়যন্ত্রের – kolkata police now getting hints of conspiracy from phone and letter sources regarding the unusual death of a student in jadavpur university


সোমনাথ মণ্ডল
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে একটি ফোনকল এবং চিঠির সূত্রে এ বার ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। ওই হস্টেলে বাংলা বিভাগের পড়ুয়ার মৃত্যুর আগে ডিন অফ স্টুডেন্টসকে যাঁর নাম করে ফোন করা হয়েছিল এবং মৃত্যুর পরে যে চিঠি উদ্ধার হয়েছে, তাতে এক সিনিয়র স্টুডেন্টের নাম জড়িয়ে গিয়েছে। মৃত ছাত্রের দেহ উদ্ধারের ঘণ্টা দেড়েক আগে ‘রুদ্র’ বলে পরিচয় দিয়ে এক পড়ুয়া ওই ফোনকলটি করেছিলেন। আবার যে রহস্যজনক চিঠিটি পুলিশের হাতে এসেছে, তাতে ‘রুদ্রদা’ মৃত ছাত্রকে হুমকি দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

Jadavpur University : হস্টেলের বাপই শেষ কথা বলে! জুনিয়ররা যেন প্রজা
ঘটনাচক্রে, সেই রুদ্র চট্টোপাধ্যায় মেন হস্টেলের আবাসিকই নন। তদন্তকারীরা মনে করেছেন, ঘটনার দিন রাতে মৃত ওই পড়ুয়ার সঙ্গে ঘৃণ্য এমন কোনও ঘটনা ঘটেছিল, যা ধাপাচাপা দিতেই কোনও কারণে রুদ্রর নাম নেওয়া হয়েছিল। এই চক্রান্তের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে ধৃত অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র দীপশেখর দত্তের বয়ানে। পুলিশের দাবি, জেরায় দীপশেখর স্বীকার করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরীর নির্দেশে ডায়েরি থেকে উদ্ধার করা ওই চিঠিটি লিখেছিলেন তিনিই। কিন্তু রুদ্রর নাম এক্ষেত্রে কেন ব্যবহার করা হয়েছিল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। এই রহস্যের কিনারা করতে সৌরভ, দীপশেখর এবং ধৃত সমাজতত্ত্বের ছাত্র মনোতোষ ঘোষকে এক সঙ্গে বসিয়ে যাদবপুর থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ।

Jadavpur University News : ৬ পড়ুয়াকে থানায় তলব, যাদবপুরের ছাত্র মৃত্যুকাণ্ডে নজরে আরও এক ‘সিনিয়র’
হস্টেল থেকে বাজেয়াপ্ত করা ডায়েরির পাতায় লেখা একটি চিঠি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। গত ৯ অগস্ট রাত পৌনে বারোটা নাগাদ হস্টেলের নীচে বাংলা বিভাগের ছাত্রের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। কিন্তু চিঠিতে তারিখ রয়েছে ১০ অগস্ট। পুলিশ খতিয়ে দেখছে, চিঠিটি ওই পড়ুয়ার মৃত্যুর আগে লেখা হয়েছিল, নাকি মৃত্যুর পরে।

Jadavpur University Student Death : ‘সমপ্রেমী’ নিয়ে পুলিশি তত্ত্বে নতুন বিতর্ক
শুধু তাই নয়, ওই চিঠিটি ঘটনার পরে কে ভাইরাল করলেন, সেই বিষয়টিও পুলিশি তদন্তের মধ্যে এসে গিয়েছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ধৃত তিন অভিযুক্ত জেরার সময় বার বার বয়ান বদল করছেন। সে কারণে দীপশেখরের হাতের লেখার সঙ্গে চিঠির বয়ানের লেখা মিলিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই চিঠির শেষে মৃত পড়ুয়ার নামে দু’টি সইও রয়েছে। দীপশেখরের দাবি, সইগুলি তাঁর নয়। তাহলে কার? তদন্তকারীদের বক্তব্য, মৃত্যুর আগে ওই পড়ুয়াকে দিয়ে জোর করে সই করানো হতে পারে।

চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রুদ্রদা’ নামে যে সিনিয়র পড়ুয়ার নাম নেওয়া হয়েছে, তাঁর সঙ্গেও ইতিমধ্যে কথা বলছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। লালবাজার সূত্রের খবর, রুদ্র চট্টোপাধ্যায় পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি হস্টেলে থাকেন না। তাঁর বাড়ি ৫ কিলোমিটার দূরে। চক্রান্ত করে ফাঁসানোর জন্য তাঁর নাম চিঠিতে লেখানো হয়েছে। ঘটনার দিন ১০টা ৫ মিনিট নাগাদ তিনি ডিনকে কোনও ফোনই করেননি। তাঁর এই দাবি খতিয়ে দেখতে ডিন অফ স্টুডেন্ট রজত রায় এবং রুদ্র চট্টোপাধ্যায়ের মোবাইলের কললিস্ট খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

Jadavpur University News : যাদবপুরের পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যুতে গ্রেফতার আরও ২
রুদ্র যদি ফোন করে না থাকেন, তা হলে তাঁর নাম করে কে ফোন করতে গেলেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সৌরভ চৌধুরীর বিরুদ্ধেও নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মৃত ছাত্রের বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডু। তাঁর দাবি, ছেলের গলা নকল করে তাঁকেও ফোন করা হয়েছিল। এই গোটা চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত সৌরভ। তা হলে কি সৌরভই রুদ্রর নাম করে সেই রাতে ফোন করেছিলেন? সে বিষয়ে জানার চেষ্টা চলছে। লালবাজার সূত্রে খবর, সেদিন রাতে ঠিক কী কী ঘটনা ঘটেছিল তা জানতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান দিয়েছেন মেন হস্টেলের রাঁধুনি।

JU Student Death : মৃত্যুর পরের দিন কে লিখল চিঠি? ‘স্বপ্নদীপের ডায়েরি’ ঘিরে নতুন রহস্য
তিনি তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, প্রথম বর্ষের স্টুডেন্টদের হস্টেলের রেলিং দিয়ে হাঁটানোর মতো চ্যালেঞ্জ দিতেন সিনিয়ররা। এই সব ঘটনা হস্টেল কর্তৃপক্ষের অজানার কথা নয়। পুলিশ কর্তাদের ধারণা, সম্ভবত ঘৃণ্য আচরণের পাশাপাশি মৃত ছাত্রকেও রেলিং দিয়ে হাঁটতে বাধ্য করা হয়। সেখান থেকে পড়ে গিয়ে পড়ুয়ার মৃত্যু হয়। এই দাবির পক্ষে তদন্তকারীদের যুক্তি, হয়ত ওখান থেকে পড়ে যাওয়াতেই দেহের একদিকে আঘাত লাগে মৃত ছাত্রের।

Jadavpur University Ragging Case : ‘র‌্যাগিং’-এর ভিডিয়ো ভাইরালের হুমকি, মোবাইলে পৃথক ফোল্ডার! সৌরভের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য
এবং এই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে তা চাপা দিতে জিবিতে বসে চিত্রনাট্য তৈরি করেন তাঁরা। ফলে জেরা শুরু হতেই সেই কাহিনী হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। এদিন ধৃতদের দফায় দফায় জেরা করেন বিভাগীয় ডিসি বিদিশা কলিতা। ঘটনাস্থলে সায়েন্টিফিক উইং-কে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কলকাতা পুলিশের অফিসারেরা ধৃতদের বয়ান মিলিয়ে ঘটনাটি পুনর্গঠন করার চেষ্টাও করেন।

এদিকে,এই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হলেও পকসো আইনের ধারা যুক্ত করা হবে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সোমবার জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল। ঘটনার দিন হস্টেলে ঢুকতে বাধা পাওয়ার ঘটনায় আলাদা করে একটি এফআইআর রুজুও করা হয়। পাশাপাশি এদিন আরও ১০জন ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *