সিংহের জন্য পার্ক তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সিংহ বাছাইও করা হয়েছে। আলিপুর চিড়িয়াখানা এবং ত্রিপুরার চিড়িয়াখানা থেকে মোট দু’জোড়া সিংহ আনা হবে। গিবনের জন্যও পৃথক ব্যবস্থা হচ্ছে। একদা হিমালয়ের বাসিন্দা এই প্রাণীটির এখন হিমালয়ে দেখা মেলে না বললেই চলে। কেবল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে দেখা যায়। এ দেশে গিবনের অস্তিত্ব কেবলমাত্র চিড়িয়াখানায়। বেঙ্গল সাফারির অন্দরে নানা প্রজাতির সাপ নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পার্কও। উদ্বোধনের অপেক্ষায় ঔষধি পার্ক ও অ্যাম্ফিথিয়েটার।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতিও চেয়েছে রাজ্য বন দপ্তর। সেই অনুমতি সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি নাগাদ হাতে পেলেই জোর কদমে বেঙ্গল সাফারিকে সাজানোর কাজ শুরু হবে। রাজ্য বন দপ্তরের সদস্য সচিব সৌরভ চৌধুরী বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া দেশের কোনও চিড়িয়াখানাই নিজে থেকে কিছু করতে পারে না। আমরাও ব্যতিক্রম নই। বেঙ্গল সাফারিকে আকর্ষণীয় করতে আরও কিছু বন্যপ্রাণী আনা হবে। কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র হাতে পেলেই বন্যপ্রাণী আনার কাজ শুরু হবে।’
২০১৬ সালে বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চলের একাংশকে নিয়ে তৈরি হয় বেঙ্গল সাফারি। এখানে এলে দেখা যায়, খোলা আকাশের নীচে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা জঙ্গলের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, হিমালয়ান ব্ল্যাক বেয়ার, চিতাবাঘ এবং গন্ডার। অগুনতি হরিণ, ময়ূর, বুনো শুয়োর, কুমীর, নানা প্রজাতির পাখি, ভাম, ফিশি ক্যাট, লেপার্ড ক্যাট, ক্যাঙ্গারু – সব মিলিয়ে ভরপুর বিনোদন। দর্শকদের ওই জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয় তারজালি দিয়ে ঘেরা গাড়িতে করে। বুনো জন্তুরা সেখানে থাকে খোলামেলা ভাবে। তবে প্রাচীর টপকানোর উপায় নেই।
গোটা রাজ্য তো বটেই, দেশেই এমন একটি চিড়িয়াখানার তুলনা মেলা ভার। দর্শকেরাও এমন অভিনব বিনোদন পেয়ে বন দপ্তরের ঝুলি ভরে দিচ্ছে। প্রতি বছর দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। তার সঙ্গে লাফিয়ে বাড়ছে আয়। ২০২০ সালে বেঙ্গল সাফারির আয় ও ব্যয় ছিল ৩ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে আয় সাড়ে ছয় কোটি, ব্যয় সাত কোটি।
কিন্তু বন দপ্তরের কর্তারা এত অল্পে সন্তুষ্ট নন। তাঁদের লক্ষ্য, বছরে অন্তত ১০ কোটি টাকা আয় করা। কাজটা অসম্ভব বলেও মনে করছেন না বন দপ্তরের কর্তারা। তাঁদের অনুমান, পুজোয় সিংহ, গিবনের মতো সমস্ত ধরনের বন্যপ্রাণী যদি আনা সম্ভব হয়, তাহলে আয় দশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ বার স্বাধীনতা দিবসেই তাঁর প্রমাণ মিলেছে। একদিনেই বেঙ্গল সাফারির আয় হয়েছে প্রায় পৌনে ছয় লক্ষ টাকা।