Ragging In Jadavpur University : মৃত্যুর রহস্য লুকিয়ে শেষ ১৫ মিনিটেই! ইন্ট্রোর নামে বিবস্ত্র করা হয় মৃত ছাত্রকে – jadavpur university main hostel allegations that the student was taken to a room and stripped before his death


এই সময়: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে বাংলা বিভাগের পড়ুয়ার মৃত্যুর আগে সিনিয়রদের ঘরে ঘোরানোর পরে একটি রুমে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করা হয়েছিল! প্রাথমিক তদন্তে এমনই তথ্য জানতে পেরেছে কলকাতা পুলিশ। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হস্টেলে অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে নেমে সৌরভ চৌধুরী, মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্তকে গ্রেপ্তার করার পরে তাঁদের জেরা করে আরও ছ’জনের নাম জানতে পারে পুলিশ। এরা হলেন,জম্মুর বাসিন্দা মহম্মদ আরিফ, পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দা আসিফ আফজল আনসারি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির বাসিন্দা অসিত সর্দার, মন্দিরবাজারের সুমন নস্কর, উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা অঙ্কন সরকার এবং পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাসিন্দা সপ্তক কামিল্যা।

Jadavpur University : হস্টেলের বাপই শেষ কথা বলে! জুনিয়ররা যেন প্রজা
মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয় এদের প্রত্যেককে। পুলিশ জানতে পেরেছে, মেন হস্টেলে ইন্ট্রোর সময়ে ওই ছাত্রকে এই সব সিনিয়রদের বিভিন্ন অপ্রিয় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। রাত ১১.৩০ মিনিটে তাঁকে বিবস্ত্র করা হয়। এরপর দেহ উদ্ধার হয় পৌনে বারোটা নাগাদ। শেষ ১৫ মিনিট ঠিক কী হয়েছিল, তাঁকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, নাকি ওই ছাত্র অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজেই লাফ দিয়েছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সেই রহস্যের কিনারা করতে আপাতত তৎপর লালবাজার। বিষয়টি জানার জন্য ধৃতদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন পড়ুয়াকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ফলে আরও গ্রেপ্তারির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

Jadavpur University News : ফোন-চিঠি জোড়াসূত্র, তত্ত্ব সেই ষড়যন্ত্রের
গ্যাংস অফ ‘হস্টেল বাপ’
ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার পরে প্রথমেই গ্রেপ্তার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরীকে। মূলত তাঁর দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে। সৌরভের নির্দেশেই ঘটনার দিন প্রথমবর্ষের ছাত্রদের উপরে নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ। সৌরভকে জেরা করে ১৫ অগস্ট যাদের গ্রেপ্তার করা হয় তার মধ্যে অসিত, সপ্তক এবং সুমন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। অন্যদিকে, মহম্মদ আরিফ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছিলেন, তিনি ওই ছাত্রকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু হাত ফসকে যাওয়ায় মৃত পড়ুয়া নীচে পড়ে যান।

Jadavpur University News : ৬ পড়ুয়াকে থানায় তলব, যাদবপুরের ছাত্র মৃত্যুকাণ্ডে নজরে আরও এক ‘সিনিয়র’
যদিও পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, নবাগত ছাত্রের উপরে অত্যাচারের সময় ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন আরিফ নিজেও। ঘটনার আগে এই আরিফের ফোনই ব্যবহার করে সৌরভ মৃত ছাত্রের মাকে কল করে মিথ্যা তথ্য দেন। ফলে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আরিফকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ কর্তাদের বক্তব্য, সৌরভের এই হস্টেল-চক্রে সঙ্গী হিসেবে ছিলেন দীপশেখর দত্ত এবং মনোতোষ ঘোষ। আবার সৌরভের উদ্যোগে মনোতোষের অতিথি হিসেবে ওই হস্টেলে ঠাঁই পেয়েছিলেন মৃত প্রথমবর্ষের ছাত্র। ফলে এরাই যে বিষয়টিতে যুক্ত তা পরিষ্কার পুলিশের কাছে। এদিন ছজন অভিযুক্তকে আদালতে পেশ করা হলে বিচারক ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। ধৃতদের মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেগুলি পরীক্ষা করে দেখছে পুলিশ।

Jadavpur University Ragging Case : ‘র‌্যাগিং’-এর ভিডিয়ো ভাইরালের হুমকি, মোবাইলে পৃথক ফোল্ডার! সৌরভের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য
রহস্যের ২ ঘণ্টায় লুকিয়ে ক্লু!
হস্টেলে প্রথমবর্ষের ছাত্ররা এলেই তাঁদের ইন্ট্রো দিতে হয়। অর্থাৎ সিনিয়র বা প্রাক্তনীদের ঘরে গেলে নবাগতকে নিজের পরিচয়ের পাশাপাশি বাবা-মা সংক্রান্ত নানা আপত্তিকর প্রশ্ন করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ। ঘটনার দিন রাতে বাংলা অনার্সের ছাত্রের ইন্ট্রো চলছিল। তাঁকেও এমন ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে ধৃত ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রে খবর। পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার দিন রাত ১০ টা নাগাদ তাঁকে ৬৮ নম্বর ঘর থেকে প্রথমে ১০৪ নম্বর রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সৌরভের নির্দেশে দীপশেখর দত্ত ছাত্রের নাম করে চিঠি লেখেন।

JU Student Death Case: স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুর ঘটনা আটক যাদবপুরের এক প্রাক্তনী, বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি
কিন্তু অভিযুক্ত স্বীকার করেছেন, তিনি চিঠির বয়না লিখলেও তাতে সই করেছিলেন নবাগত পড়ুয়া। পুলিশ মনে করছে, চিঠি লেখানোটাও ছিল ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। কারণ, মৃত্যুর ২ ঘণ্টা আগে ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়কে ফোন করে ওই ছাত্রের অস্বাভাবিক আচরণের কথা বলেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়। ততক্ষণে হস্টেলে শুরু হয়ে গিয়েছিল ইন্ট্রো পর্ব। রাত ১১টা নাগাদ চিঠি লেখানোর আধঘণ্টা পরে ওই ছাত্রকে বিবস্ত্র করা হয়। পুলিস সূত্রের খবর, ওই ছাত্র গামছা পরে ঘুরছিলেন বলে জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছেন। কিন্তু যখন তাঁর দেহ উদ্ধার হয়, কোনও বস্ত্রই সেখান থেকে পাওয়া যায়নি। ফলে মিথ্যা তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

Jadavpur University Student Death : ‘সমপ্রেমী’ নিয়ে পুলিশি তত্ত্বে নতুন বিতর্ক
তালা দিতে হুকুম দেওয়া হয় কেন?
ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার পরে নিরাপত্তারক্ষীকে হস্টেলের গেটে তালা দিতে হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। লালবাজারের দাবি, হলুদ ট্যাক্সি করে ওই পড়ুয়াকে হাসপাতালের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়ার পরে হস্টেল সুপার দ্বৈপায়ন দত্ত এবং ছাত্রদের একাংশ বলেছিলেন, গেট বন্ধ রাখতে। বাইরে থেকে কেউ যেন ঢুকতে না পারেন। এরপর অটো এবং একটি ট্যাক্সি ঢোকে হস্টেলে। ওই ছাত্রকে ট্যাক্সিতে করে নিয়ে যাওয়ার পরে অ্যাম্বুল্যান্সও আসে।

Jadavpur University News : ‘১০০% গ্যারান্টি….,ফাঁসানো হয়েছে’! স্বপ্নদীপের বাবাকে দুষলেন সৌরভের মা
জানা গিয়েছে, হলুদ ট্যাক্সি বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক আগে কলকাতা পুলিশের দু’জন অফিসারও সেখানে আসেন। কিন্তু তাঁদেরও ভিতরে যেতে দেওয়া হয়নি। এদিকে, বুধবার রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের এসপি শান্তি দাস যাদবপুর থানা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। যে ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে ওঁদের বর্ণনা শুনেছি। এ বার আমরা নিজেদের মতো করে কাজ করব। আরও বেশ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলার পরে রিপোর্ট তৈরি করা হবে।’

র‍্যাগিং-এ কী পদক্ষেপ? লালবাজারে রেজিস্ট্রার
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ র‍্যাগিং রুখতে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, এ বিষয়ে বুধবার লালবাজারে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েন রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। তাঁকে কয়েক দফায় প্রশ্ন করেন গোয়েন্দা প্রধান শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী এবং বিভাগীয় ডিসি বিদিশা কলিতা। র‍্যাগিং-এর অভিযোগ ওঠায় এই ঘটনা নিয়ে এর আগে রেজিস্ট্রারকে নোটিস পাঠিয়ে ছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও।

Jadavpur University News : ফের প্রাক্তনী যোগ! যাদবপুর পড়ুয়ামৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার আরও ৬
এদিন রেজিস্ট্রারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভি আছে কি না, না থাকলে কেন নেই, হস্টেলে কাদের থাকার বন্দোবস্ত করা হয়, এ রকম একগুচ্ছ প্রশ্ন করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, তিনি ওই সব প্রশ্নের জবাব দিতে আরও দু’দিন সময় চেয়েছেন। এদিন ডিন অফ স্টুডেন্ট রজত রায়কেও তলব করা হয়। যদিও ঘেরাও হয়ে থাকার কারণে তিনি হাজিরা দিতে পারেননি। অন্যদিকে, জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তিনি সম্প্রতি ছাত্র মৃত্যু নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। সে কারণে এই তলব বলে মনে করা হচ্ছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *