সোমবার এবং বুধবার দু’দফায় অধিকাংশ জেলা পরিষদের বোর্ড গঠিত হয়েছে। জেলা সভাধিপতি পদে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের মধ্যে বীরভূমে কাজল শেখ, উত্তর ২৪ পরগনার নারায়ণ গোস্বামী ছাড়া পরিচিত মুখ প্রায় নেই। বীরভূমে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে কাজল দীর্ঘদিন অনুব্রত মণ্ডলের বিপরীত শিবিরে থেকেছেন। এতদিন নানুরের নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি।
এই প্রথম একধাপে জেলা সভাধিপতি হলেন ডাকাবুকো এই নেতা। শপথগ্রহণের পর বুধবার অবশ্য তিনি বলেন, ‘অনুব্রত মণ্ডল আমার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু। যেটুকু শিখেছি ওঁর থেকেই শিখেছি। ওঁর দেখানো পথেই চলতে চাই।’ যদিও বীরভূমে এক সময়ে অনুব্রত-কাজলের প্রবল দ্বন্দ্ব দেখা গিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে সভাধিপতি হয়েছেন খেজুরির উত্তম বারিক। হুগলিতে জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়া। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রতিভা মাইতি, ঝাড়গ্রামে চিন্ময়ী মারান্ডি। মুর্শিদাবাদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা।
তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেনের কথায়, ‘নবজোয়ার যাত্রায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের পঞ্চায়েত গড়ার কথা বলেছিলেন। মানুষের রায় নিয়েই প্রার্থী বাছাই করা হয়েছিল। মানুষের মনোভাবকে মাথায় রেখে সভাধিপতি নির্বাচন করা হয়েছে।’ বিদায়ী জেলা পরিষদের কোনও সভাধিপতির এ বার ফের দায়িত্ব পাওয়ার নজির খুব কম। এর মধ্যে হাওড়া অন্যতম। এখানে সভাধিপতি হয়েছেন কাবেরী দাস সিংহ, সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য। এই জুটি গত পঞ্চায়েত ভোটের পরেও এই দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরেও ফের প্রধান হওয়ার নির্দশন গতবারের তুলনায় অনেকটা কম।
উত্তরবঙ্গে আলিপুরদুয়ারে জেলা পরিষদের সভাধিপতি হয়েছেন স্নিগ্ধা সাইবা, কোচবিহারে সুমিতা বর্মন, মালদায় লিপিকা ঘোষ, দক্ষিণ দিনাজপুরে চিন্তামণি বিহা। উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই সভাধিপতি পদে এসেছেন নতুন মুখ। সেখানে মহিলা ছাড়াও তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের ভিতর থেকে সভাধিপতি করা হয়েছে। তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, ‘নবজোয়ার যাত্রার সময়েই নতুন মুখকে পঞ্চায়েতে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলেছিলেন অভিষেক। সেই ভাবনা অনুযায়ী নতুন মুখ রয়েছেন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতে কাজের গতি আনতে, মানুষের চাহিদা পূরণ করতেই এই পদক্ষেপ। প্রবীণদেরও বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
কাজল শেখ বাদে পোড়খাওয়া যে নেতা সভাধিপতির দায়িত্ব পেয়েছেন, তিনি হলেন উত্তর ২৪ পরগনার নারায়ণ গোস্বামী। বিদায়ী জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন তিনি। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, একাধিক জেলায় প্রথমে যাঁকে সভাধিপতি করা হবে বলে ভাবা হয়েছিল, পরে শেষ মুহূর্তে সেই নাম বদলানো হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, দক্ষিণ দিনাজপুর-সহ কিছু জেলায় প্রথমে যাঁকে সভাধিপতি করার কথা ভাবা হয়েছিল, পরে বোর্ড গঠনের ২৪ ঘণ্টা আগে তাঁদের বদলে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশে ঠিক হয় নতুন নাম।