যদিও সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা বলেছেন। ফলে নিরাপত্তায় নজরদারির অন্যতম অস্ত্র আদৌ বসবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধন্দ। ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর যে সার্কুলার জারি করা হয়েছিল, এ বারেও হুবহু সেই নির্দেশিকা প্রকাশ করা হলেও তাতে নবাগত ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কঠোর কোনও পদক্ষেপের ব্যাপারে বিশদে কিছুই বলা নেই। অতএব, সব মিলিয়ে সংশয়ের আবহ জারি রয়েছে ক্যাম্পাসে।
এরই মধ্যে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় ছ’দিন কেটে যাওয়ার পরে তৎপর হয়েছে উচ্চশিক্ষা দপ্তর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রুটি খুঁজতে তারা চার সদস্যের তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি দু’সপ্তাহের মধ্যে যাদবপুর নিয়ে রিপোর্ট জমা দেবে। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ না-থাকলেও সিসিটিভি বসানোর বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্নেহমঞ্জু বলেন, ‘সিসিটিভি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি। কিন্তু সেই বৈঠক কবে হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যও নেই। তাই সহ-উপাচার্য ও কয়েকজন আধিকারিক মিলে জরুরি ভিত্তিতে ঠিক করেছেন, ক্যাম্পাস এবং হস্টেলের গেটে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।’ তাঁর সংযোজন, ‘বাকি স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে ডাকা হয়েছে। সেই সঙ্গে টেকনিক্যাল এক্সপার্টরাও জানাবেন, কোথায় কোথায় সিসি ক্যামেরা বসানো যেতে পারে। ইলেকট্রিক্যাল-সহ আরও অনেকের সাহায্য দরকার। তার পরেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।’ ফলে যাদবপুরে কবে ও কখন সিসিটিভি বসবে এবং তা কার্যকর হবে, তা নিয়ে ধন্দ বেড়েছে বই কমেনি।
জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বৈধ’ পরিচয়পত্র ছাড়া রাত ৮টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে না। পড়ুয়াদের পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হলে, প্রত্যেকে তা দেখাতে বাধ্য থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য যাঁরা আসবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অন্য কোনও বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে তবেই প্রবেশ করা যাবে ক্যাম্পাসে। গেটে রাখা থাকবে নাম নথিভুক্তির রেজিস্টার। প্রবেশকারী যে ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন, তাঁর বিষয়ে বিশদে সমস্ত তথ্য ওই খাতায় নথিভুক্ত করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সব গাড়ি বা দু’চাকা প্রবেশ করবে, সেগুলিতে কর্তৃপক্ষের দেওয়া স্টিকার থাকতে হবে। যে সব গাড়িতে কর্তৃপক্ষের দেওয়া স্টিকার থাকবে না, প্রবেশের সময়ে সেগুলির রেজিস্ট্রেশন নম্বর গেটে জানাতে হবে। সে সব তথ্য রাখবেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তাঁরা চাইলে গাড়িচালক ও যাত্রীদের বৈধ পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। একই সঙ্গে ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মাদকের ব্যবহার এবং আইন-বিরোধী কাজকর্ম একেবারেই নিষিদ্ধ। কেউ এ সব করতে গিয়ে ধরা পড়লে, তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিন উচ্চশিক্ষা দপ্তরের আধিকারিক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, যাদবপুরের প্রথম বর্ষের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ওই ছাত্র র্যাগিংয়ের শিকার বলে অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু প্রশাসনিক ত্রুটি এবং পরিকাঠামোগত ফাঁকফোকর ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের নজরে এসেছে। সেই গলদগুলি খুঁজে বের করা ও সমস্যার সমাধানে উচ্চশিক্ষা দপ্তর সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে।
তাতে চারজন সদস্য থাকছেন। তাঁরা হলেন উচ্চশিক্ষা সংসদের ভাইস চেয়ারপার্সন কৌশিকী দাশগুপ্ত, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিশেষ কমিশনার চন্দনী টুডু, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা অধিকর্তা জয়শ্রী রায়চৌধুরী এবং উচ্চশিক্ষা সংসদের সদস্য-সচিব শিবাজি ঘোষ। বিজ্ঞপ্তি জারি করার সঙ্গে সঙ্গে কমিটি তার কাজ শুরু করবে।