আল কায়দার ‘ট্রেইনড’ জঙ্গি সে। যদিও সবার কাছে তার পরিচয়, ইসলামের দক্ষ শিক্ষক। জঙ্গির বৃদ্ধা মা সংস্কৃতে অনার্স। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গানগরে সম্ভ্রান্ত পরিবার হিসেবে খ্যাতি তাঁদের। সেই ঘরের ছেলে, ইসলামের শিক্ষক আব্দুর রাকিব সরকার কী করে আল কায়দার মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর এ রাজ্যের মাথা হয়ে পড়ল, তা আজও তাঁর পরিবারের কাছে স্পষ্ট নয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ-এর হাতে ধরা পড়া রাকিব বাংলাদেশের এক মৌলবাদী লেখকের বই পড়ে এবং পরে সরাসরি তার সংস্পর্শে এসে সন্ত্রাসের রাস্তায় পা রাখে। সগীর বিন ইমদাদ নামের সেই বাংলাদেশি লেখক বিএসএফকে ফাঁকি দিয়ে এ পারে এসে মগজধোলাই করে গিয়েছে রাকিবের।
সেই সগীর বিন ইমদাদকে পরে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজ়ম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। তাকে জেরা করেই ‘আল কায়দা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট’ (আকিস)-এর ভারতের শীর্ষনেতা আবু তালহাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আপাতত সগীরকে জামিনে ছাড়া হলেও সে সিটিটিসি’র নজরবন্দি। নিয়মিত তাকে পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হয়।
রাকিবের ঘনিষ্ঠদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, তাকে যখন আকিস-এ যোগ দেওয়ার জন্য ‘দাওয়াত’ (জঙ্গি গোষ্ঠীর মাথারা এ ক্ষেত্রে আমন্ত্রণ জানালে তবেই গোষ্ঠীর সদস্য হওয়া যায়) দেওয়া হয়, সেই সময়ে তাকে সগীরের বই পড়তে দেওয়া হয়েছিল। মৌলবাদের যুক্তিজালে ভরপুর সেই বই। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লা বাংলা টিম’-এর শীর্ষ নেতাদের কিছু ভিডিয়ো ফাইলও দেওয়া হয়েছিল। যার মোদ্দা বক্তব্য ছিল, শরিয়তি শাসন কায়েম করার জন্য বলিদান দেওয়ার থেকে বড় কাজ কিছু নেই। সগীরের বই এবং ওই ভিডিয়োতেই মগজ ধোলাই হয়েছিল রাকিবের।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, ২০১৮ সালের বকরি ঈদ-এর সময়ে সগীরকে কোচবিহারের রথেরডাঙায় আনা হয়েছিল। চ্যাংরাবান্ধা বর্ডার দিয়ে চোরাপথে সে এপারে এসেছিল। তখন রাকিব রথেরডাঙা মোড়ের একটি মসজিদের মৌলানা ছিল। স্থানীয় একটি মাদ্রাসাতে সে পড়াত।
সগীরকে প্রথমে মাদ্রাসাতে তোলা হয়েছিল। পরে একটি বাড়িতে তাকে রাখা হয়। সেখানে বেশ কিছু দিন কাটিয়ে সে বাংলাদেশে ফিরে যায়। এর মধ্যেই সে রাকিবের মগজধোলাই করছিল। সগীরকে এপারে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল রাকিবেরই এক বন্ধু। সে আগেই আকিস-এর সদস্য হয়েছিল। সগীর নিজেও তার লেখা বই রাকিবকে দিয়ে যায়। এর কিছু দিন পরেই রাকিব ‘আকিস’-এর দাওয়াত কবুল করে। হাওড়ার ডোমজুড়ের বাঁকড়ায় ‘আকিস’-এর এক নেতার ডেরায় সে জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য হয়।
এখানেই এখানে প্রশ্ন উঠছে সীমান্তপারের নজরদারি নিয়ে। রাকিব ছাড়াও আকিস-এর সঙ্গে যুক্ত আরও অন্তত ৮ বাংলাদেশি বিভিন্ন রাজ্যে গ্রেপ্তার হয়েছিল। তারাও কোচবিহারের সীমান্ত এলাকা দিয়েই এপারে ঢুকেছিল। তার পরে এপারে নান্নু মিয়া নামে আল কায়দার স্লিপার সেলের সদস্যের হাতযশে তারা আধার কার্ড এবং পাসপোর্ট তৈরি করিয়ে নেয়।