Didi No 1 : প্রেম করে বিয়ে, সংসার চালাতে চপ বেচে দিদি নং ১-এ শ্রীরামপুরের উমা – one couple lead life by selling chop name shops name on didi no 1


“খাবার ঠিক জুটে যাবে, শুধু পাশে দাঁড়িয়ে বলিস কোনও দিন ছেড়ে যাব না”…
বহু বছর আগে উমার দিকে তাকিয়ে এমনটাই বলেছিলেন বিশ্বজিৎ। ক্লাস সেভেনের তরুণী প্রেম-ভালোবাসা খুব একটা বেশি বোঝেনি। শুধু বুঝেছিল, আগামী ৬০টা বসন্ত এই বন্ধুর হাতে হাত রেখে নিশ্চিন্তে কাটানো যায়।

একটু বড় হওয়ার পরেই স্কুল পালিয়ে দু’জনে বিয়ে করে দু’জনে। কথায় আছে, অভাব দরজা দিয়ে ঢুকলে ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু, ভালোবাসা দিয়ে সেই জানালাটা বন্ধ করতে পেরেছিলেন উমা এবং বিশ্বজিৎ। শ্রীরামপুরের এই যুগল তাঁদের ভালোবাসার কথা শুনিয়েছেন দিদি নং ১-এ। অভিভূত এই শোয়ের হোস্ট রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
Hooghly Love Story: ‘ভালোবেসে ছিলাম…’, ১৫ বছরের ‘প্রেমিকা’কে অপহরণে অভিযুক্ত বিবাহিত প্রেমিক, তারপর…
সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলে প্রথম দেখা এই যুগলের। এরপর তাঁদের মধ্যে ধীরে ধীরে ভালোবাসা দানা বাঁধে। পালিয়ে দু’জনে বিয়ে করেন। প্রথমে দুই পরিবারের অমত থাকলেও পরবর্তীতে তারাও মেনে নেয়। কিন্তু, কী ভাবে সংসার চালাবেন তা ভেবে উঠতে পারছিলেন না বিশ্বজিৎ ।

একটি চশমার দোকানে কাজ করে তাঁর যা উপার্জন হত তাতে সংসার চালানো দায়। বিয়ের এক বছর পরেই একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন উমা। এরপরেই তাঁদের সংসার চালানো আরও কঠিন হয়ে পড়ে। সেই সময়ই চপের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেন উমা। শ্রীরামপুরের মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরের কাছেই ত্রিপল টাঙিয়ে ছোট্ট একটি দোকান করেন তাঁরা। প্রথম দিকে তাঁদের বিক্রি হত ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। পাঁচ থেকে ১০ টাকা থাকত লাভ। এদিকে ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠতে থাকে মেয়ে। তার পড়াশোনার খরচ চালাতেও হিমশিম খেতে হয় যুগলকে।

Trending News : গোঁফদার কীর্তিতে থ এলাকাবাসী! মোচের জোরে আজব কেরামতি হুগলির অশোকের
এদিকে ব্যবসায় সময় দেওয়ার জন্য মেয়েকেও সময় দিতে পারছিলেন না তাঁরা। এরপরেই মেয়েকে বাপের বাড়িতে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নেন এই যুগল। তখন থেকেই মেয়ে উমার বাবার কাছে পড়াশোনা করতে থাকে।

এরপর সেই চপের দোকানের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। মাহেশের জগন্নাথ ট্রাস্টি বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে দোকানের জায়গাটি কেনেন উমা ও তাঁর স্বামী। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। চপ বিক্রি করেই মেয়েকে MA, ডিএলএড করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি জায়গা কিনে বাড়িও করেছেন তাঁরা।

Jadavpur University News : ‘বদগুণকে স্বাধীনতা বলা যায় না…’, যাদবপুরে পড়ুয়াদের একাংশের ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ নিয়ে সরব কল্যাণ
প্রথমে চপ দিয়ে শুরু করলেও এখন সেই দোকানে বেগুনি, ফুলুরি, কচুরি, সোয়াবিন চপ, ভেজিটেবিল চপ, ক্যাপসিকামের চপ থেকে বিভিন্ন রকমের পদ পাওয়া যায়। বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হয় তেলেভাজার দোকান, যা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রতিদিন গড়ে ৭০০০ টাকার বিক্রি করেন দম্পতি। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে তেলেভাজার দোকান চালিয়ে আসছেন উমা বিশ্বজিৎ।

এরপরেই ২০১৭ সালে হঠাৎই একদিন দিদি নং ১-এ ডাক পান উমা। খেলতে গিয়ে জয়ী না হলেও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন তিনি। এদিকে এই শো থেকে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরেই নিজের চপের দোকানের নাম তিনি রাখেন ‘দিদি নং ১’। শুধু শ্রীরামপুর নয়, বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা আসেন তার কাছে চপ খেতে।

Howrah News : দিনে দুপুরে ব্যবসায়ীকে অপহরণ! CCTV ফুটেজ দেখে গ্রেফতার ২
উমা ও বিশ্বজিৎ জানান, চপ বিক্রি সম্পর্কে তাঁদের কোনও ধারনা ছিল না। ধীরে ধীরে সবটাই রপ্ত করতে হয়েছে তাঁদের। পাশাপাশি দোকানের নাম বদল প্রসঙ্গে উমা বলেন, “একসময় দোকানটির নাম ছিল নিরুপনা ভেজিটেবিল হাউস। আমি দিদি নং ওয়ানে যাওয়ার পর থেকে এখন সকলেই দোকানটিকে এই নামে চেনেন।”

জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান সেবাইত পিয়ার অধিকারী বলেন, উমার চপের দোকান বহু পুরনো। আমার বাবা এই দোকানটি ভাড়া দেন। তা জগন্নাথ জিউ ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে রয়েছে। যারা আমাদের ভাড়াটিয়া তাঁদের প্রত্যেককেই সহানুভূতির সঙ্গে দেখি। বিশ্বজিৎ ও উমা দু’জনেই অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।”



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *