অধিকাংশ উদ্যোগপতিই শিলিগুড়ি, সিকিম এবং দার্জিলিংয়ের। সেই কর্মশালায় সকলের নজর কাড়েন প্রশংসা। তিনি বলেন, ‘করোনার সময়ে হোম ডেলিভারির কাজে নামি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও লোকজন যোগাযোগ করতে থাকে। তখনই হোম ডেলিভারিকে পেশা করার সিদ্ধান্ত নিই। তাতে পাহাড়ের নতুন এবং ছোট উদ্যোগপতিদের পাশেও দাঁড়াতে পারছি।’
খাবার থেকে তেল, নুন, পাউরুটি, সবই বাড়িতে পৌঁছে দেয় প্রশংসার দলবল। বাড়িতে তৈরি আচার, জ্যাম, কেক বিক্রি করার কোনও উপায় না-পেয়ে যাঁরা দিশেহারা, তাঁদেরও পাশে রয়েছেন প্রশংসা। কী ভাবে উৎপাদিত পণ্যকে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই ব্যাপারেও পরামর্শদাতা তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে তাঁর এই উদ্যোগে।
৮ জন কর্মী রয়েছেন তাঁর সংস্থায়। উৎসবের মরশুমে কর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। মাস কমিউনিকেশনে স্নাতক প্রশংসা, সিনেমা তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন মুম্বইয়ে। কিন্তু নিজের শহর দার্জিলিংয়ে কিছু করার জন্য ২০১৮ সালে সব ছেড়ে পাহাড়ে ফিরে আসেন। লকডাউনে খুঁজে পান পথ। যখন দোকান-বাজার বন্ধ, সংক্রমণের ভয়ে প্রতিবেশীদের পর্যন্ত মুখ দর্শনে অনীহা, সেই সময়ে দার্জিলিংয়ের বয়স্ক, অবসরপ্রাপ্তদের জন্য হোম ডেলিভারি ব্যবসা চালু করেন তিনি।
তবে সকলের অবস্থা প্রশংসার মতো নয়। কনট্যাক্ট বেস কর্তৃপক্ষের দাবি, করোনা পরবর্তী সময়ে সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চল জুড়েই মহিলা উদ্যোগপতিদের হাল ভালো নয়। অনেকে পুঁজির অভাবে ধুঁকছেন। যাঁরা অনলাইনে, নতুন পরিকল্পনা নিয়ে ব্যবসায় নেমেছেন তাঁদের মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিং এবং প্যাকেজিং নিয়ে সমস্যা রয়েছে। ব্যবসায় নেমে নিজেদের দুরবস্থার কথা শুনিয়েছেন নেপালের ইলম জেলার উওম্যান এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশনের সভানেত্রী সুশীলা সাপকোটা। তাঁর খেদ, ‘একটা চকোলেট তৈরি করতে গেলেও নেপালে প্যাকেজিংয়ের কোনও সুবিধে মেলে না। আমাদেরও তেমন অভিজ্ঞতা নেই। সেই কারণেই শিলিগুড়িতে ছুটে এসেছি।’
কনট্যাক্ট বেস সংগঠনের ডিরেক্টর অনন্যা ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই অঞ্চলে মহিলারা আগে অনেকরকম ব্যবসা করলেও করোনা পরবর্তী সময়ে তাতে ছেদ পড়েছে। আমরা ফের তাঁদের জীবনে কর্মব্যস্ততার দিনগুলি ফিরিয়ে দিতে চাই।’ মহিলা উদ্যোগপতিদের পাশে দাঁড়াতে ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অফ কমার্স, কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যাসোসিয়েশন অব কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের মতো সংস্থাকেও যুক্ত করেছে কনট্যাক্ট বেস কর্তৃপক্ষ। শিলিগুড়ির ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অফ কমার্সের চেয়ারম্যান সঞ্জয় গোয়েলের মতে, ‘ছোট ছোট টার্গেট নিয়ে উদ্যোগপতিদের এগোতে হবে।’ কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান প্রদীপ আগরওয়াল বলেন, ‘ব্র্যান্ডিং, প্যাকেজিং এবং মার্কেটিং ছাড়া এখন কোনও ব্যবসা এগোতে পারে না।’
ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বরাবরই ভালো। এই সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতেই ইউএস কনসুলেট গত ১৭ অগস্ট ‘কনট্যাক্ট বেস’ সংস্থাকে শিলিগুড়িতে এই কর্মশালার দায়িত্ব দেয়।