বিজ্ঞানী সৌমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জন্য গর্বে বুক ফোলাচ্ছে নিউ টাউন। শ্রীহরিকোটা থেকে চন্দ্রযান-৩ এর যে সফল উৎক্ষেপণ হয়েছিল, তার পিছনে ছিল সফটওয়ার প্রোগ্রামিং এর সঠিক প্রয়োগ। সেই প্রোগ্রামিং মাধ্যমেই গত একচল্লিশ-বিয়াল্লিশ দিন ধরে একের পর এক নির্দেশ পাঠানো সম্ভব হয়েছে চন্দ্রযান ৩-এ। যার ফলে বিক্রমের সফল ল্যান্ডিং এর ক্ষেত্রে বড়সড় অবদান রয়েছে সৌমজিতেরও। দীর্ঘদিন বেঙ্গালুরুতে বসে যে টিম এই কাজ করছে, সেই টিমকে লিড করছেন নিউ টাউনের বাসিন্দা কৃতী বাঙালি।
প্রথম থেকেই ৩৯ বছরের সৌমজিৎকে যোগ্য সহায়তা, ভরসা জুগিয়ে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা। আর নিউটাউনের সি ই ব্লকে বসে ছেলেকে নিরলস আশীর্বাদ, শুভকামনা জানিয়েছেন তাঁর বাবা, মা। সৌমজিতের বাবা দেবদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এই অনুভূতি বলে বোঝানোর নয়। গত কয়েকদিন ছেলের ঘুম খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আজকে সফল ল্যান্ডিং এর পর ছেলে বাড়িতে ফোন করে কেঁদে ফেলল। বলল, ‘এটা গোটা বিশ্বের জয়। আমাদের দেশ আগামী দিনে আরও বড় কিছু করে দেখাবে।’ এদিন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পক্ষ থেকে এলাকায় মিষ্টি বিতরণও করা হয়। প্রতিবেশী বাসুদেব মোশেল বলেন, ‘সৌমজিৎ শুধু নিউটাউন নয়, গোটা দেশের গর্ব।’
সৌমজিৎ এতবড় দায়িত্ব অবশ্য একদিনে পাননি। বাড়ির আদরের পিকু (ডাকনাম) এক সময় থাকতেন বীরভূমের সিউড়ি ব্লকের রায়পুর গ্রামে। সেখানে রাতের অন্ধকারে আকাশের দিকে তাকিয়ে মা নন্দিতা চট্টোপাধ্যায়কে একের পর এক প্রশ্ন করতেন গ্রহ-নক্ষত্র সম্পর্কে। তখন মা কিংবা ব্যাঙ্ক অফিসার বাবা ঘূণাক্ষরেও টের পাননি তাঁদের সন্তান একদিন বিজ্ঞানী হয়ে গবেষণার জগতে প্রবেশ করবেন।
কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে বি টেক পড়ার সময়েই ইসরোয় পরীক্ষা দিয়ে ভাল র্যাঙ্ক করেন সৌম্যজিৎ। ২০০৭ সালে তিনি ইসরোর বেঙ্গালুরু অফিসে যোগ দেন। তখন থেকেই টানা ১৬ বছর ইসরোর ইউ আর স্যাটেলাইট কেন্দ্রে কর্মরত। এর আগে ২০১৪ সালে সৌমজিৎ মঙ্গলযান-এর মিশন গ্রুপের কোর কমিটিতে ছিলেন। ২০১৯ এর চন্দ্রযান-২ অভিযানেও মিশন গ্রুপের কোর কমিটিতে বড় দায়িত্ব সামলেছিলেন নিউটাউনের কৃতী সন্তান।
তারও আগে চন্দ্রযান-১ এর মিশন গ্রুপেও তিনি দক্ষতার পরিচয় দেন। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে সৌমজিৎ চিত্তরঞ্জনে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। সল্টলেকের অরবিন্দ ইন্সটিটিউশন অফ এডুকেশন থেকে আইসিএসই পরীক্ষায় স্কুলের মধ্যে প্রথম হন। অন্য অনেক চাকরির প্রলোভন এলেও কখনও ইসরো ছাড়ার কথা ভাবেননি তিনি। বাবা-মার কথায়, ‘আগামীতে ইসরোর সৌর অভিযান মিশন আদিত্যতেও অংশগ্রহণ করার ইচ্ছে রয়েছে পিকুর।’