‘বিকট শব্দের পর উড়ে এসে পড়ল কাটা হাত; দেখেই বেহুঁশ শাশুড়ি’


পিয়ালি মিত্র: দত্তপুকুরের বাজি কারখানা ভয়ংকর বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৫টি বাড়ি। কোনও বাড়ির সামনের অংশ ভেঙে পড়েছে। কোনও বাড়ির দরজা ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে। উড়ে গিয়েছে বাড়ির জানালা। চারদিকে ছড়িয়েছিটিয়ে ধ্বংসস্তূপ। এখনওপর্যন্ত ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। তবে ভয়ংকর বিষয় হল বিস্ফোরণের দাপটে হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে ঘটনাস্থলের কয়েকশো মিটার দূরে।

আরও পড়ুন-দত্তপুকুরে বাজি কারখানার বিস্ফোরণে উড়ল একাধিক বাড়ির ছাদ, নিহত কমপক্ষে ৭

রবিবার সকালে প্রবল বিস্ফোরণের দাপটে কেঁপে ওঠে দত্তপুকুরের মোচপুর পশ্চিমপাড়া। প্রথমে বিস্ফোরণ, পরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে দেখেন স্থানীয় মানুষজন। সামসুল আলম নামে একজনের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বাজি কারখানা চালাচ্ছিলেন কেরামত আলি নামে এক ব্যক্তি। যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে তার পাশের বাড়িতে বিস্ফোরণের তীব্রতায় একেবারে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। অন্য একটি বাড়ির নীচের অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ফলে বোঝাই য়ায় কী পরিমাণ বিস্ফোরক ওই কারখানায় মজুত করে রাখা হয়েছিল। আসপাশের একাধিক বাডিতেও তৈরি হতো বাজি।

ঘটনার ভয়াবহতা কতটা তা এলাকা ঘুরলেই চোখে পড়ে। যে বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটছে তার আসেপাশের ৫টি বাড়ি ভেঙেচুরে গিয়েছে। বাড়ির পিলার ভেঙে পড়েছে। এগরায় ভানুবাগের কারখানায় যে বিস্ফোরণ হয়েছিল সেই কারখানাটি ছিল ফাঁকে মাঠে। কিন্তু দত্তপুকুরে মোচপুরে যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে সেটি রয়েছে একেবারে চাপা বস্তির মধ্য়ে। বিস্ফোরণের দাপটে কেঁপে ওঠে কয়েকশো মিটার ব্যাসার্ধের এলাকা। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২৫০ মিটার দূরের বাড়িও ক্ষতিগ্রস্থ। সেখানে উড়ে এসে পড়ে একটি ইট। সেই বাড়ির এক মহিলা বলেন, ঘরে বসেছিলাম। বিশাল বিস্ফোরণের একটা শব্দ পেলাম। দেখলাম বাড়ির মাঝখানে একটি হাত ও ইট এসে পড়ল। সেসব দেখেই বেহুঁশ হয়ে যান আমার শাশুড়ি। ছেলে মেয়েরা বলতে লাগল শরীর কেমন করছে।

পিংলা বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে মানুষের দেহাংশ বহুদূরের গাছে পর্যন্ত আটকে থাকতে দেখা গিয়েছিল। দত্তপুকুরের ক্ষেত্রে ঘটনাস্থল থেকে কয়েকশো মিটার দূরে কারও বাড়িতে হাত, কারও বাড়িতে পা উড়ে এসে পড়েছে।  প্রশ্ন উঠছে এত মানুষের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কী ভাবে একটি পাড়ার মধ্যে বাজি কারখানা চলত। এলাকারই এক গৃহবধূ বলেন, প্রথম প্রবল এক বিস্ফোরণের আওয়াজ হল। গোটা এলাকাটা অন্ধকার হয়ে যায়। আমার স্বামী অসুস্থ। তাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে চলে এলাম। বাইরে এসে দেখি একটা কাটা হাত পড়ে রয়েছে।

ঘটনাস্থলের অবস্থা, পাশের বাড়িগুলির ধ্বংসের ছবি দেখে অন্তত আন্দাজ করা যায় প্রচুর বিস্ফোরক ওই কারখানায় মজুত করা হয়েছিল। এর ফলেই বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটা বেশি হয়েছিল যে মানুষের হাত-পা উড়ে গিয়ে পড়ে কয়েকশো মিটার দূরে। এনিয়ে বাড়ি বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী শুভঙ্কর মান্না বলেন, যেসব বাজি ছুড়ে ফাটানো হয় তা একেবারেই নিষিদ্ধ। কেন্দ্রের গ্রিন বাজি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা শুধুমাত্র কয়েকটি বাজিকে ছাড়পত্র দিয়েছে। শব্দবাজি তৈরির কোনও অনুমতি পশ্চিমবঙ্গে নেই। শব্দবাজি তৈরির জন্য পটাসিয়াম ক্লোরেট নামে একটি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। সেই রাসায়নিকটি জলের ছোঁয়া পেলেই বিস্ফোরণ ঘটে। হয়তো সেই রাসায়নিক মজুত করা ছিল। গতকাল বৃষ্টি হয়েছে। হয়তো সেই জল চুঁইয়ে সেই মজুত পটাসিয়াম ক্লোরেটে পড়েছে। তা থেকেই বিস্ফোরণ হতে পারে। এটা আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়।

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *