লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে একাধিক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদল করতে পারে তৃণমূল। সদ্য হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট জেলায় জোড়াফুলের ফলাফল এবং জেলা সভাপতির সার্বিক পারফরম্যান্সের নিরিখেই এই বদলের ভাবনা শুরু হয়েছে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য। কোন কোন সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি বদল হতে পারে সর্বোচ্চ স্তরে তার চুলচেরা পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। নতুন জেলা সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি ভোটকুশলী সংস্থার পরামর্শ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য।
এই অদলবদলের প্রক্রিয়ায় বীরভূম জেলায় দুটি সাংগঠনিক জেলা গঠনের সম্ভবনা রয়েছে। আরও একটি-দুটি জেলায় বাড়তি সাংগঠনিক জেলা গঠন হতে পারে। তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতার কথায়, ‘কিছু সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদল হতে চলেছে। যদিও কবে তা ঘোষণা হবে সেটা দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব ঠিক করার পরে দলনেত্রীর অনুমোদন নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন সভাপতিদের নাম চূড়ান্ত করবেন। লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে সার্বিক যে প্রস্তুতি চলছে জেলায় জেলায় সভাপতি বদল সেই প্রক্রিয়ারই অঙ্গ। যে লোকসভা কেন্দ্রে সংগঠনকে আরও সক্রিয় করা প্রয়োজন সেখানে সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বদল হতে পারে।’
উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ উভয় দিকেই একাধিক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বদলের ইঙ্গিত রয়েছে। তৃণমূলে এখন ৩৫ টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। অধিকাংশ সাংগঠনিক জেলা মোটামুটি একটি লোকসভা কেন্দ্রের ভৌগোলিক এলাকা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট লোকসভার একটি দুটি বিধানসভা পাশের সাংগঠনিক জেলাতেও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে।
যেমন, বীরভূম জেলাতে দুটি লোকসভা কেন্দ্র থাকলেও সেখানে এখনও একটি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পরে এক বছর কেটে গেলেও বীরভূমে নতুন জেলা সভাপতি নিয়োগ করা হয়নি। পূর্ব বর্ধমান জেলায় দুটি লোকসভা কেন্দ্র থাকলেও একটি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনাতে চারটি লোকসভা কেন্দ্র থাকলেও দুটি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে।
তৃণমূলের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা এক নেতার কথায়, ‘বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমানে দুটি সাংগঠনিক জেলা হতে পারে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দুটির জেলার বদলে তিনটি সাংগঠনিক জেলা হতে পারে। নেতৃত্বের সর্বোচ্চ স্তরে নতুন সাংগঠনিক জেলা গঠন নিয়েও আলোচনা চলছে। এই বিষয়ে একটি ভোটকুশলী সংস্থার পরামর্শ গ্রহণ করা হচ্ছে।’
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপরই অতীতের সাংগঠনিক কাঠামো বদল করে নতুন সাংগঠনিক জেলার কাঠামো তৈরি করা হয়। গত দু-বছরে একাধিক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিভিন্ন সময়ে বদল করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলা থেকে দক্ষিণবঙ্গে তমলুক, বনগাঁ, রানাঘাট প্রভৃতি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদল করা হয়েছে। অনেকেই আবার টানা দু-বছর ধরেই এই পদ রয়েছেন। তৃণমূলের এক সাংগঠনিক জেলা সভাপতির কথায়, ‘প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা সভাপতির কাজকর্ম নিরন্তর মনিটরিং ও পর্যালোচনা করা হয়। এই মাপকাঠিতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেই সভাপতি বদল করা হয়। এছাড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নতুন কোনও দায়িত্ব পেলে সেই জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা হয়।’