ছিলেন গাড়ির চালক। সেখান থেকে শাসকের ছায়ায় থেকে বিদ্যুৎ গতিতে উত্থান। বারাসাত শহর লাগোয়া মোচপোল পশ্চিমপাড়ায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় সেই আজিবর রহমানের ভূমিকা নিয়ে সরব গ্রামবাসীরা। তবে যার কথা না-শুনলে এতদিন রোষের মুখে পড়তে হতো এলাকাবাসীকে, রবিবার বিস্ফোরণের পর যেন উলটপুরাণ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিস্ফোরণের পরেই ঝাঁ চকচকে দোতলা বাড়ির গেটে তালা ঝুলিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন আজিবর।
মোচপোলের বাসিন্দাদের সাফ অভিযোগ, আজিবর আর পুলিশের প্রত্যক্ষ মদতেই ওই অঞ্চলে রমরমিয়ে চলছিল বেআইনি বাজি কারখানা। গ্রামবাসীদের দাবি, এর জন্য ‘মাসোহারা’ পৌঁছে যেত নেতাদের পকেটে। তাই সব জেনেও তাঁরা চুপ। অথচ চুপ না থাকলে এই বিস্ফোরণ, এতগুলো প্রাণহানি হয়তো ঘটতই না। মাস ছয়েক আগেই ঘনবসতিপূর্ণ পাড়ার মধ্যে সামসুল আলির বাড়িতে বেআইনি ভাবে বাজি কারখানা চালানো নিয়ে সরব হয়েছিলেন স্থানীয়রা। বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে দত্তপুকুর থানায় স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন।
তাতে কাজের কাজ তো কিছুই হয়ইনি। বরং যাঁরা থানায় বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে নালিশ করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের ছেলেদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের দাবি, সেই ঘটনারও কান্ডারি ছিল শাসক-ঘনিষ্ঠ আজিবর। মোচপোলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, শাসক-ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে এলাকায় নিজেকে সে তৃণমূল নেতা বলেই পরিচয় দিত। গাড়িচালকের কাজ ছেড়ে শাসক নেতাদের ছত্রছায়ায় এসে প্রথমে ইমারতি ব্যবসা এবং বছর দুয়েক আগে বাজির ব্যবসা শুরু করেন আজিবর।
কয়েক বছরেই একচিলতে বাড়ি হয়ে যায় ঝাঁ চকচকে দোতলা বাড়ি। সেখানেই দিব্যি চালাচ্ছিলেন বাজির ব্যবসা। সামসুল আলির বাড়ি-সহ এলাকায় আরও যেসব বেআইনি বাজি কারখানা রয়েছে, তার সবটার পিছনে এই আজিবরের মদত ছিল বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পেতেন না কেউ। স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, ‘বাজি কারখানার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানোয় আমার ছেলেকে গাঁজা কেস দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২২ দিন জেলে ছিল ছেলে’। গ্রামের আরও কয়েক জনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
রবিবার সামসুলের বাড়িতে বিস্ফোরণের পরই পরিবার নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন আজিবর। তবে তাতে বাসিন্দাদের ক্ষোভ কমেনি। ভাঙচুর চলেছে তাঁর বাড়িতেও। বাড়িতে মজুত করা বাজির প্যাকেট, বারুদ ফেলে দিয়েছেন বাসিন্দারা। এখনও বস্তাভর্তি বারুদ মজুত রয়েছে আজিবরের বাড়িতে, ত্রিপলে ঘেরা ছোট্ট ঘরে। বাসিন্দাদের কথায়, পুলিশ সব জেনেও নীরব ছিল।
বারাসত পুলিশ জেলার সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় যদিও বলেন, ‘বাসিন্দারা যে অভিযোগ করছেন তা আমরা খতিয়ে দেখছি’। স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী রথীন ঘোষের কথায়, ‘পাশের নারায়ণপুরে বাজি তৈরি হতো জানতাম। মোচপোলে একই কাজ চলত, সেটা বিস্ফোরণের পর শুনছি। আমার এবং আমাদের দলের বদনাম করা হচ্ছে। দলীয় রং না দেখে পুলিশ ব্যবস্থা নিক। কোনও আপত্তি নেই। তবে শুনেছি ওই এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে আইএসএফ প্রার্থী জেতার পরে ফের বেআইনি বাজির কারবার চালু হয়েছিল’।