বস্তুত, গোটা অগস্ট জুড়ে ঝোড়ো ব্যাটিং করে চলেছে ডেঙ্গি। স্বাস্থ্য দপ্তরের ৩০ তম সপ্তাহের রিপোর্ট জানিয়েছিল, ২৭ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৩৬৯ জন। তার ঠিক এক মাস পরে সেই সংখ্যাই সাড়ে ১৩ হাজার পেরিয়েছ। শেষ এক মাসে সংক্রমণ বেড়েছে ১০ হাজার! যার মানে, দৈনিক ৩০০ জনের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন অগস্টে।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, অগস্টের শেষে এমনটা অস্বাভাবিক নয়। বরং সেপ্টেম্বরের গোড়ায় আরও অবনতি হতে পারে। কেননা, ডেঙ্গির এটাই আসল মরসুম। যদিও চিকিৎসকদের চিন্তা বাড়িয়েছে পর পর দু’বছরের তুলনামূলক পরিসংখ্যান। গত বছর অগস্টের শেষ সপ্তাহে দেখা গিয়েছিল, রাজ্যজুড়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ১০ হাজারের কম। সেখানে এ বছর সংখ্যাটা শনিবার পর্যন্ত ১৩,৬৫০। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, এ বছর পর্যাপ্ত ভারী বৃষ্টি না হওয়াই এর মূলে। টানা ভারী বৃষ্টিতে ডেঙ্গির বাহক এডিস মশার লার্ভা ধুয়ে যায়। এ বছর তেমন বৃষ্টি হয়নি।
বরাবর ডেঙ্গি সংক্রমণে শীর্ষে থাকে উত্তর ২৪ পরগনা। তার পরেই কলকাতা। কিন্তু চলতি বছর আগাগোড়া সংক্রমণে পয়লা নম্বরে ছিল নদিয়া। তবে অগস্টের মাঝামাঝি থেকে বদলাতে থাকে ছবিটা। নদিয়াকে টপকে শীর্ষে চলে আসে উত্তর ২৪ পরগনা। শুধু এই জেলাতে এ বছর ডেঙ্গি আক্রান্ত চার হাজার ছুঁইছুঁই। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ বিধাননগরে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের প্রায় চার গুণ (৫০৪)। ডেঙ্গি ছড়িয়েছে দক্ষিণ দমদমেও (৩১০)। তুলনায় শহর কলকাতায় (৯৮৯) সংক্রমণ তেমন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায়নি এখনও।
এমনিতে ডেঙ্গি বরাবরই শহুরে সংক্রমণ বলে পরিচিত। কিন্তু করোনা-পর্বের আগে থেকেই দেখা যাচ্ছে, শহর পেরিয়ে ডেঙ্গির সংক্রমণ ছড়াচ্ছে গ্রামাঞ্চলেও। গত বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এ বছর শহর, গ্রাম–দু’ক্ষেত্রেই ব্যাপক ভাবে ডেঙ্গি ছড়িয়েছে শুধু নয়, চলতি বছর শহরকে বরং পিছনে ফেলে দিয়েছে গ্রাম। স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসেব বলছে, ডেঙ্গির প্রকোপ ৬০% গ্রামাঞ্চলে, ৪০% শহরাঞ্চলে। গ্রাম-শহর, জেলা-সব নিরিখেই শীর্ষে উত্তর ২৪ পরগনা। তার পরেই রয়েছে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ।