সেই সেমিনারে জানানো হয়, ম্যালেরিয়ার জীবাণু মানুষের শরীর থেকে নিয়ে সরাসরি অন্য মানুষে না দিয়ে নিজের শরীরে রেখে জীবাণুর জীবনচক্র সম্পূর্ণ করে তারপর সুস্থ মানুষের শরীরে স্থানান্তর করছে । এক্ষেত্রে মশা যান্ত্রিক বাহক নয় । অর্গানিক ও জৈব বাহক । জীববিদ্যার ভাষায় একে বলা হয় “ভেক্টর”। এখানেই শেষ নয়, বিষয়টি আরও একটু ব্যাখা করে বলা হয়- ‘পদার্থ বিদ্যার ভাষায় যে রাশির মান আর দিক দুই থাকে তাকে ভেক্টর বলে । যেমন সরণ বা বেগ । জীববিদ্যার ক্ষেত্রে শুধু জীবাণুর স্থানান্তর নয় তার সঙ্গে জীবাণুর জীবনচক্রের বেশ কিছু দশা অতিবাহিত হবে যার শরীরে সেই ভেক্টর । দুটো প্যারামিটার থাকে । তাই সে ভেক্টর ।’
এদিকে অগাস্ট পড়তেই দক্ষিণবঙ্গে জাঁকিয়ে চলছে বর্ষা। জল জমছে খাঁজে খন্দে । এতেই মশাদের ভারী উল্লাস আর আহ্লাদ । ওদের জমাটি সংসার। প্রশাসন কাঁপছে । ডেঙ্গি ম্যালেরিয়ার খবরে বাতাস সরগরম । নাজেহাল আমজনতা থেকে ডাক্তার প্রশাসন । মজা করে অধ্যাপক বলেন, ‘শুধু একটা প্রাণী – মশা , একা মশাই আমাদের লেজে গোবরে করে ছাড়ল । কত কত কোটি কোটি টাকা খরচ করিয়ে ছাড়ছে! কত যুগ ধরে কত মানুষের প্রাণ নিয়ে ছাড়ল! কত প্রচামাধ্যম কত খরচ কত সচেতনতা ! তবুও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মশাবাহিত রোগ। ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গি, এনকেফালাইটিস সবেতেই মশা ভেক্টর হিসেবে খেলা চালিয়ে যাচ্ছে । এক্কেবারে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মেজাজে । শুধুই কি মশা ? পুকুরে থাকা শামুক লিমনিয়া, এন্ডপ্লানোরবিস গাইরুলাস এরা আরও খতরনাক -ভয়ানক, বিভিন্ন কৃমির ভেক্টর । গবাদি জীবের শরীরে পেটখারাপের জীবাণু স্থানান্তর ঘটায় । বালু মাছি সে ও কম কিসের? এমন কারণেই তো মহামারি হয়ে ওঠেছিল কোভিড।’
অধ্যাপক নিজের বক্তব্যে বলেন, ‘বিবর্তন কী বলে? পরজীবী যদি পোষকের ক্ষতি করে তাহলে বিবর্তন তাকে আস্কারা দিয়ে রাখে কেন? আধুনিক মলিকুলার বায়োলজি কী বলে? এ নিয়ে একটি প্রানিবিজ্ঞানে আস্ত একটা শাখা আছে ।’
ভেক্টর বায়োলজি এ সম্পর্কে কিছু আধুনিক খবর আর সচেতনতার বার্তা তুলে ধরতে মহিষাদল রাজ কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে
উদ্যোগে আয়োজন করা হয় বিশেষ সেমিনার। সেই সেমিনারে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। অধ্যাপক ডক্টর বিপ্লব মণ্ডল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠরত কচিকাঁচাদের সামনে তাঁর বার্তা তুলে ধরেন । হরেক প্রশ্ন । আধুনিক গবেষণার খুঁটিনাটি প্রশ্নের উত্তর ও সমাধানের পথ দেখান বিপ্লববাবু।