দত্তপুকুরের মোচপোল পশ্চিমপাড়ায় বাজি বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে পরিত্যক্ত ইটভাটায় রীতিমতো ল্যাবরেটরি বানিয়ে বেআইনি বাজি তৈরির কারখানা সামনে এসেছিল রবিবারই। স্থানীয় লোকজন সেখানে ভাঙচুর চালান, পুলিশ সোমবার গিয়ে প্রচুর মালপত্র বাজেয়াপ্তও করে। কিন্তু ওই কারখানার অন্যতম অংশীদার, আব্দুল মোহিত বিস্ফোরণের আধঘণ্টার মধ্যেই বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে বেপাত্তা হয়ে যান। এখনও তাঁর খোঁজ পায়নি পুলিশ। এ দিকে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, মোহিত শুধু ওই কারখানা নয়, মোচপোল, বেরু নানপুকুরিয়া-সহ নারায়ণপুর এলাকার প্রচুর বেআইনি বাজি কারখানা ও বাজির ব্যবসার মাস্টারমাইন্ড!
রবিবারের বিস্ফোরণস্থল থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে কাঠিরিয়ায় সাজানো গোছানো দোতলা বাড়ি মোহিতের। একতলায় পাঁচটা দোকানঘর, সবগুলোই ভাড়া দেওয়া। এই বাড়িতেই দুই মেয়ে, এক ছেলে-সহ স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন মোহিত। আগে মাটির খুচরো ব্যবসা করতেন। সেই ব্যবসা করতে করতেই হাত পাকান জমির দালালিতে। তত দিনে নারায়ণপুরে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে।
বারাসত-ব্যারাকপুর রোডের ধারে কয়েকটি কারখানা গড়ে ওঠায় এলাকার জমির দাম একলপ্তেই অনেকটা বেড়ে যায়। দালালি, জমি কেনাবেচা করে রাতারাতি কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে যান মোহিত। তখনই তাঁর চোখ পড়ে বেআইনি বাজির ব্যবসায়। মোহিতের টার্গেট ছিল স্থানীয় বাজি কারখানাগুলোই।
প্রথমে বাজির মশলা এনে কারখানায় সাপ্লাইয়ের কাজ শুরু করেন মোহিত। পরে কারখানার কাজে টাকা খাটাতেও শুরু করেন। দিনে দিনে মোচপোল, বেরু নানপুকুরিয়া-সহ নারায়ণপুরের বাজি কারখানাগুলির নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন তিনি। কাঁচা পয়সার লোভ সামলাতে না পেরে বাজি কারখানার অংশীদারও হন। মোচপোল গ্রামের ১ কিমি দূরেই বেরু নানপুকুরিয়া গ্রামের রাস্তার ধারে ছিল কেবিএম ইটভাটা। বহু বছর ধরেই বন্ধ। সেই ইটভাটার জমি লিজ নিয়ে গত কয়েক বছর আগে বাজি কারখানা শুরু করেন মোহিত। তাঁর সঙ্গে বাজি ব্যবসার অংশীদার হন সাদ্দাম হোসেন, শাসক-ঘনিষ্ঠ আজিবর রহমান, লাল্টুরা।
ইটভাটার ওই জমিতে বাজি কারখানার তিনটি শেড রয়েছে। প্লাস্টিকের ছাউনি, দরমার বেড়ার আড়ালে ৫-৬টি মেশিন বসানো। এখানেই রমরমিয়ে চলত মোহিতের বেআইনি বাজি কারখানা। পাশে আরও একটি ছাউনিতে বিরাট কংক্রিটের চাতালে ছোট ছোট বালি পাথর শুকানো হতো। সায়েন্স ল্যাবের মতো তিনটি টেবিলে সাজানো বিকার, টেস্ট টিউব, সেফটি হেলমেট। মেঝেয় ড্রাম ভর্তি রাসায়নিক জাইভেল এইচভিএস।
এই রাসায়নিক বিকারে অনুপাত অনুযায়ী ঢেলে মেশানো হতো বাজি তৈরির মশলার সঙ্গে। বাজি বিস্ফোরণের তীব্রতা বৃদ্ধি করতেই রাসায়নিক মেশানো হতো বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার বন্ধ ইটভাটার ভিতরের কারখানা থেকে পুলিশ দুই গাড়ি বাজি উদ্ধার করেছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঘনিষ্ঠের দাবি, জমির দালালি, বাজি ব্যবসার হাত ধরে বিরাট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন মোহিত। এলাকার বাজি কারখানার তিনিই নিয়ন্ত্রক। এই মুহুর্তে মোহিত পাঁচটি জমির প্লটিং করছেন বিক্রির জন্য।