Duttapukur Blast : ৬৫% সুদে দাদনের টোপ দিয়ে ব্যবসার মাথারা আড়ালেই, পুজোর আগে মোটা টাকার লোভে বিনিয়োগ গ্রাম জুড়ে – dependent on high rates from moneylenders there was a thriving betting business at mochpole in duttapukur


অশীন বিশ্বাস, দত্তপুকুর
দাদন! তিন অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দই এখন বহুল চর্চিত দত্তপুকুরের মোচপোলে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে যেখানে টাকা গচ্ছিত রাখলে সর্বোচ্চ ৭.৮৫% হারে সুদ পাওয়া যায়, সেখানে বাজি ব্যবসায় টাকা খাটালে সুদ মেলে ৪০ থেকে ৬৫%! মহাজনের থেকে এমন চড়া হারে দাদনের উপর নির্ভর করেই চলত রমরমা বাজি ব্যবসার সিংহভাগ। যার উপর ভর করেই ফুলেফেঁপে উঠেছিল বিস্ফোরণ কাণ্ডে মৃত কেরামত আলি, সামসুল আলিরা। আবার তাদের ব্যবসায় টাকা খাটিয়ে হু হু করে সম্পত্তির বিস্তার ঘটছিল এলাকার কিছু প্রভাবশালীর। যদিও তাদের প্রত্যেকেই এখন সপরিবার বেপাত্তা।

Duttapukur Blast : দত্তপুকুরে আলু বোমা বাঁধার ইকোনমিতেই স্বনির্ভর মহিলারা, মুখে কুলুপ প্রশাসনের
দাদন শব্দের অর্থ কোনও কাজ করার জন্য অগ্রিম টাকা দেওয়া। মোচপোল পশ্চিমপাড়া শুধু নয়, আশপাশের কাঠুরিয়া, বেরুনানপুকুরিয়া, মালিকাপুর, নারায়ণপুর জুড়ে বাজি ব্যবসাকে ঘিরে এই শব্দের বহুল প্রচলন। গ্রামের গরিব মানুষরাই এই ব্যবসার একেবারে নিচুতলায় জড়িত। কিন্তু এই পিরামিডের একেবারে শীর্ষে মোটা টাকার থলি নিয়ে বসে আছেন আর এক শ্রেণির মানুষ। গ্রামে যাদের অর্থের প্রয়োজন তাদের টার্গেট করেন এরা। টার্গেটের তালিকায় নিজেদের আত্মীয়রাও বাদ যায় না। তিন চার মাসের জন্য চড়া সুদের টোপ দেওয়া হয় তাদের। তবে গোটা ব্যাপারটাই হতো মৌখিক ভাবে।

Duttapukur Blast : পলাতক মোহিতই সাম্রাজ্যের বাজিকর, দত্তপুকুরের বাজির ব্যবসার মাস্টারমাইন্ড!
যদি কেউ চার মাসের জন্য কেউ চার লক্ষ টাকা বাজি ব্যবসার কারবারিদের দেন, তাকে আসল-সহ পাঁচ লক্ষ টাকা, আবার কেউ দু’লক্ষ টাকা দিলে চার মাসে আড়াই লক্ষেরও বেশি টাকা, কেউ এক লক্ষ টাকা দিলে দেড় লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়া হতো। কাউকে ৪০% হারে, কাউকে ৫০ তো কাউকে ৬৫% হারে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে দাদন নেওয়া হতো। পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই এই প্রক্রিয়া চালু করতেন অসাধু ব্যবসায়ীরা৷ কারণ পুজোর সময় বাজির চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। পুজো মিটে গেলেই সুদে আসলে সেই টাকা মিটিয়ে দেওয়া হতো।

Duttapukur Blast : ১০০০ ‘মাল’ করতে পারলেই ১২০ টাকা! দত্তপুকুরে কীভাবে চলত গোটা কারবার?
বাজি শিল্পে গ্রামের মহিলারাও অনেকে ওই বাজি ব্যবসায়ীদের কাছে পারিশ্রমিক জমিয়ে রাখতেন। সেই জমা টাকার পরিমাণ এক লক্ষ ছাড়ালে সেই টাকাও মহিলারা দাদন হিসেবে বাজি ব্যবসায় খাটাতেন। ফলে প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও, পরোক্ষ ভাবে এই সব গ্রামের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ বাজি ব্যবসার সাথে নিজেদের যুক্ত করে ফেলেছিলেন। আর এরই সুযোগে কেরামত, সামসুলের মতো প্রভাবশালীরা বিপজ্জনক ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছিল দ্রুত।

Duttapukur Blast : ছ’মাস আগেই নালিশ থানায়, এলাকাবাসীর প্রশ্নে ‘মাসোহারা’
বিস্ফোরণ স্থলের পাশে দাঁড়িয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির কথায়, ‘মোচপোল গ্রামে বেআইনি বাজি ব্যবসার যে বিস্তার ঘটেছিল তাতে দাদনই ছিল ব্যবসার অন্যতম পুঁজি।’ কিছু দূরে দাঁড়িয়ে এক যুবক বলেন, ‘কয়েকদিন আগেই সামসুল আমার কাছে চার লক্ষ টাকা দাদন হিসেবে চেয়েছিল। চার মাস পর সেটি পাঁচ লক্ষ টাকা দেবে বলেছিল। ভাগ্যিস দিইনি। তাহলে আমার পুরো টাকাটাই জলে যেত।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *