চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্তারা সবাই বলছেন, এটা ভালো লক্ষণ। এর জন্যই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কম। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায়ের কথায়, ‘ডেন-৩ বেশি থাকা একদিক থেকে ভালোই। এই বছর ডেঙ্গি আক্রান্তের হাসপাতালে ভর্তির নজির শুধু কম নয়, ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে সঙ্কটজনক হয়ে ওঠার প্রবণতাও কম গত বছরের চেয়ে।’ তবে তিনি সতর্ক করছেন, এই ট্রেন্ড সেপ্টেম্বরে না-ও থাকতে পারে। ঠিক যেমন গত বছর হয়েছিল। মরশুমের গোড়ার দিকে ডেন-৩ স্ট্রেনের পাল্লা ভারী থাকলেও পরের দিকে দেখা গিয়েছিল ডেন-২-র দাপট।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি ভাইরাসের চারটি প্রজাতির মধ্যে তুলনায় নিরীহ ডেন-১ ও ডেন-৩। আগ্রাসী ও মারমুখী ডেন-২ ও ডেন-৪। এই দু’টি স্ট্রেন তাণ্ডব শুরু করলে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ে, দেখা যায় মৃত্যুমিছিল। ঠিক যেমনটা দেখা গিয়েছিল ২০১৯-এ। সে বছর আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার হলেও মৃতের সংখ্যা ১০০ পেরিয়েছিল। ২০২২-এ ডেন-৩ স্ট্রেন ৫২% ময়দান দখলে রাখলেও ডেন-২ স্ট্রেনও (৪০%) খুব পিছিয়ে ছিল না। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭ হাজার হলেও মৃতের সংখ্যা ছিল ৩০। এবার অবশ্য ডেন-৩ স্ট্রেনের চেয়ে পিছিয়ে ডেন-২।
জুলাই-অগস্টের সেরোটাইপিং রিপোর্টে ডেন-৩ প্রজাতিরই রমরমা দেখা যাচ্ছে। জুলাইয়ের (৬৩%) চেয়ে ডেন-৩ আরও বেড়ে গিয়েছে। ডেন-২ স্ট্রেন বাড়লেও জুলাইয়ের (১৭%) তুলনায় তা সামান্যই। যদিও মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ সৌগত ঘোষ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘২০২২ ছাড়া গত কয়েক বছরে ডেন-৩ খুবই কম সংক্রমণ ছড়িয়েছে। তাই এই স্ট্রেনটির বিরুদ্ধে ইমিউনিটি বেশি মানুষের নেই। ফলে অনেকেরই অতীতে একবার ডেঙ্গি (হয়তো ডেন-২) হয়ে যাওয়ার পরও এ বছর ফের ডেঙ্গি হচ্ছে ডেন-৩ স্ট্রেনের জন্য। দ্বিতীয় বার ডেঙ্গি হওয়া সব সময়েই ঝুঁকির।’
তবে গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গির থাবা চওড়া হলেও মোটের উপর যে হাসপাতালে ভর্তির বহর কম, সে কথা জানাতে গিয়ে পিয়ারলেসের সিইও সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘হিসেব করে দেখেছি, গত বছর এই সময়ে গড়ে রোজ ২৪ জন করে ডেঙ্গি রোগী ভর্তি থাকতেন। এখন সংখ্যাটা বড়জোর ২০।’ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের এক চিকিৎসকও জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির ভরা মরশুমে গত বছর যেমন সব বেড ভরা থাকছিল প্রায় সব সময়ে, এ বছর এখনও তেমনটা হয়নি।
তবে ব্যতিক্রমও আছে। উডল্যান্ডস হাসপাতালের সিইও তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর রূপালি বসু জানাচ্ছেন, জুলাই পর্যন্ত হিসেব ধরলে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের চেয়ে ডেঙ্গি রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার নজির তাঁদের হাসপাতালে কমই। তবে অগস্টের হিসেব ধরলে ভর্তির সংখ্যাটা ৩০% বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। একই সুর মেডিকা হাসপাতাল গোষ্ঠীর জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর অয়নাভ দেবগুপ্তের গলায়। তিনি বলেন, ‘জুলাই-অগস্টের হিসেব ধরলে, ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর ভর্তি ৪০-৫০% বেড়েছে।’