দত্তপুকুর বাজি বিস্ফোরণের পর সুখের দিন ঘুচেছে ঘটনাস্থলের আশপাশের বাসিন্দাদের। তিন মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ের বিবাহের দিন ঠিক করেছিলেন মোচপোল পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা মা মহিনুর নাহার বিবি ও বাবা হামিদ আলী। কিন্তু, সেদিনের বিস্ফোরণ যেন ওলট-পালট করে দিয়েছে সব কিছু। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ভেঙে পড়েছে বাড়ি। মাথার ছাদটুকুও আজ প্রায় নেই বললেই চলে। বাড়ির অ্যাসবেস্টার থেকে দেওয়াল, এমনকি ঘরের দরজা,সবই হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। মাথার উপরের ছাদ উড়ে যেতেই এখন বিয়ে ছেড়ে মাথা গোঁজার আস্তানা নিয়ে চিন্তায় মাস পড়লেই মেয়ের বিয়ের দিন ঠিক করা হলেও, এখন বিয়ের জন্য জমানো টাকা দিয়েই হয়তো ঠিক করতে হবে ঘরবাড়ি। আত্মীয়স্বজন থেকে পরিচিতিদের আপ্যায়ন করা হয়ে গিয়েছে,বিয়ের কার্ডও ছাপানো সম্পূর্ণ। বিস্ফোরণের ফলে এভাবে অর্থ ব্যয় হয়ে যাওয়ায় রীতিমতো দুশ্চিন্তার ভাঁজ মেয়ের মা মহিনুর নাহার বিবির কপালে। বাবা হামিদ আলী পেশায় কৃষক। মহিনুর নাহার বিবি নিতান্তই গৃহবধূ। বিয়ের দিন ঠিক হওয়ায় নানা পরিকল্পনা করছিলেন তারা, জমানো কষ্টের টাকায় কীভাবে সব করা হবে তা নিয়ে চলছিল আলোচনা। তারই মাঝে ঘটল এই চরম বিপত্তি। ভেঙে পড়েছে মাথা গোজার ঠাঁই টুকুও। মেয়ের নয়া সংসারের স্বপ্ন না নিজেদের ঠিকানা বাঁচানোকে অগ্রাধিকার দেবে সেই নিয়ে দোলাচালে গোটা পরিবার।
উত্তর ২৪ পরগনার বিরা এলাকার একটি ছেলের সঙ্গে সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখ বিয়ের কথা রয়েছে মেয়ের। হবু জামাই মুদির দোকানের ব্যবসায়ী। আকস্মিকভাবে এদিন বিস্ফোরণের ঘটনায় তাদের সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে একনিমেষে। জমানো অর্থে এখন বাড়ি ঠিক করবেন, নাকি মেয়ের বিয়ে দেবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না মহিনুর নাহার বিবি। ঘটনার পর থেকেই বাবা ও মা দুজনই মেয়ের বিয়ে নিয়ে প্রবল দুশ্চিন্তায়। বিস্ফোরণ স্থলের উল্টো পাশেই বাড়ি হওয়ায় আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়ির মত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই বাড়িও। এখন কী ভাবে হবে মেয়ের বিয়ে! এখনও পর্যন্ত কোন ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হয়নি প্রশাসনের তরফ থেকে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সকলের মতই দুশ্চিন্তার প্রহর গুনছে অসহায় এই পরিবার।
যদিও ছেলের বাড়ি থেকে কোনরকম বিয়ের তারিখ পরিবর্তন করার নিয়ে কোন চিন্তাভাবনা করেনি। সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখেই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা বলছে মেয়ের ভাবী শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। কিন্তু সেই বিয়ে করানোর জন্য টাকা জোগানো নিয়েই মূল চিন্তা। বাড়ির সামনে যেমন ক্ষতি হয়েছে তেমনই বাড়ির পিছনের দিকে থাকা ঘরগুলিতে ধ্বংসলীলা চলেছে।এখন বাড়ি ঠিক করার থেকেও দুশ্চিন্তা মেয়ের বিয়ে এই ভাঙা বাড়ি থেকে কী করে সামলাবেন। সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। ক্ষতিপূরণ ঘোষণার আশায় রয়েছেন সকলে।