কেউ জানাচ্ছেন, প্রোমোটারকে ফুল পেমেন্ট করেও ফ্ল্যাটের পজেশন পাচ্ছেন না। কারও আবার নতুন ইলেক্ট্রিক মিটারের চাহিদা। কেউ বা অভিযোগ জানাচ্ছেন পাড়ার মাস্তানদের নিয়ে। অভিযোগে ভুল নেই, অসত্য কিছু নেই। কিন্তু ওই সব অভিযোগ যাচ্ছে রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখায় (এসিবি)!যে তদন্তকারী সংস্থা সরকারি অফিসার ও কর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করে। কাজেই, ওই সব অভিযোগ স্বভাবতই আজব ঠেকছে এসিবি-র কাছে। এসিবি-র অফিসাররা জেরবার ওই সব অভিযোগের ঠেলায়।
এসিবি-তে এক অভিযোগকারীর বক্তব্য, ‘টাকা দিয়েও প্রোমোটার ফ্ল্যাট হ্যান্ডওভার করছেন না। কলকাতা পুরসভাকে জানিয়েও লাভ হয়নি। টাকা খাওয়ার ব্যাপার আছে। যে কোনও উপায়ে প্রোমোটারকে গ্রেপ্তার করুন।’ আবার কেউ লিখেছেন, ‘থানায় অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও চোখের সামনে দোষীরা ঘুরে বেরাচ্ছে। পুলিশ দেখেও দেখছে না। আপনাদের কাছে অনুরোধ, দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন।’ এমনকী, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির (ডব্লিউবিএসইডিসিএল) বিরুদ্ধেও নালিশ পৌঁছেছে এসিবি-র অফিসে। কেউ কেউ অভিযোগে জানাচ্ছেন, বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও তাঁদের ঘরে ইলেক্ট্রিকের নতুন মিটার বসছে না।
এক্তিয়ার না থাকলেও অবশ্য এই ধরনের অভিযোগকে একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছেন না এসিবি-র কর্তারা। ই-মেল অথবা হাতে লেখা অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে হচ্ছে তাঁদের। এর পর, কী ভাবে সমস্যার সমাধান সম্ভব, সেই উপায়ও বাতলে দিতে হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। প্রতিটি অভিযোগ এসিবি তাদের ফাইলে লিপিবদ্ধ করার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগে ওই অভিযোগপত্র ‘ফরওয়ার্ড’ করতে হচ্ছে।
সূত্রের খবর, সব চেয়ে বেশি অভিযোগ আসছে কলকাতা এবং হাওড়া পুর এলাকা থেকে। বেশির ভাগই প্রোমোটিং সংক্রান্ত অভিযোগ। সেই কারণে পুরসভা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানাচ্ছেন এসিবি-র অফিসারেরা। এই অভিযোগের বিষয়ে এসিবি-র কোনও কর্তা মন্তব্য না করলেও অন্দরের খবর, বছরে কমপক্ষে এই ধরনের হাজার খানেক অভিযোগ আসছে। আবার এমনও অভিযোগ আসছে, যেগুলি ফরওয়ার্ডেড। অর্থাৎ, কপি টু এসিবি। যেগুলোর কোনও প্রয়োজনীয়তাই নেই বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা বিভাগ।
২০১২-তে অ্যান্টি করাপশন ব্রাঞ্চের (এসিবি) পথ চলা শুরু হয়। সরকারি অফিসার ছাড়াও, পুরসভা, পঞ্চায়েত, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, সমবায় সংস্থা, বিভিন্ন নিগম-সহ সরকারের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে থাকা সব সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম ও নানা ধরনের দুর্নীতির তদন্ত করতে পারে এসিবি। অভিযোগ পাওয়ার পর পিসি অ্যাক্ট-এ মামলা রুজু করতে পারে তদন্তকারী সংস্থা। তবে সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অনুমতি লাগে। ওই সংস্থার অফিস নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ের ৯তলায়। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তভার রয়েছে এসিবি-র হাতে।