স্মৃতির সেই সরণিই শনিবার ভোর ৫টা নাগাদ কেমন যেন এলেমেলো হয়ে গেল, যখন ভবানীপুরের সেই পদ্মপুকুর তল্লাটে ভেঙে পড়ল পুরোনো বাড়িটি। তার ঠিকানা ২৪-ই পদ্মপুকুর রোড। ছবির শুটিংয়ের সময়ে পুরোনো কলকাতার সেই পাড়ার সার সার রোয়াকওয়ালা বাড়ির সামনের গলিপথ দিয়ে কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালকের হেঁটে যাওয়ার ছবি ধরা পড়েছে স্টিল ফোটোগ্রাফারের ক্যামেরায়। বনেদি কলকাতার চিহ্ন তখন ওই পাড়ার ছত্রে ছত্রে।
বাড়িগুলোয় একই সঙ্গে ইউরোপীয় ও দেশজ স্থাপত্যের মিশ্রণ। ওই পাড়াতেই কালো একটা অ্যাম্বাসাডর গাড়ি করে ঢুকেছিল ভবানন্দ ও তার চেলা। উদ্দেশ্য ছিল, জাতিস্মর মুকুলকে কিডন্যাপ্ড করে নিয়ে তারা বেরিয়ে পড়বে সোনার কেল্লার সন্ধানে, মুলুকের কাছ থেকে পাবে রাশি রাশি গুপ্তধনের হদিশ। কিন্তু তার বদলে ভুল করে তারা মুকুল নামেই পাড়ার অন্য এক খুদেকে ঠিকানা খোঁজার অছিলায় অজ্ঞান করে কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়েছিল।
পরে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ঘুমের ওষুধ মেশানো দুধ খাইয়ে অন্য সেই মুকুলকে বেহুঁশ করে তারা এনেই ফেলে দিয়ে গিয়েছিল ওই পাড়ার গলিতে। সেই পাড়ার যে বাড়িটি এ দিন ভেঙে পড়েছে, তার গায়ে ‘বিপজ্জনক’ তকমা দিয়ে আগেই বোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছিল কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ। তবে একবার সরে গেলে আর ঠাঁই মিলবে না, সেই আশঙ্কায় বাড়ি ছেড়ে যাননি কেউই। বাড়িটি যখন ভেঙে পড়ে সেই সময়ে ভিতরে ছিলেন কেবল এক জন প্রৌঢ়।
তবে তাঁর কোনও আঘাত লাগেনি বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের কর্তাদের বক্তব্য, টানা বৃষ্টির কারণেই দোতলা বাড়িটির ভিতের একাংশ নরম হয়ে পড়েছিল। তার পর এ দিন ভোরের ঘটনা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয়, ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অসীম বসু।
তিনি বলেন, ‘বারবার বাড়ির মালিককে সতর্ক করলেও তিনি মেরামতি ও সংস্কারের কাজে হাত দেননি। বাড়িটি সংস্কারের কাজ যাতে শুরু হয়, সে বিষয়ে পুরসভার সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করা হবে।’ তবে তাতে কি আর এ দিন এলোমেলো হয়ে পড়া স্মৃতি ফিরে আসবে!