জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: গত মাসে তাঁর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া হয়নি ঠিকই। তবে হেরেও দেশবাসীর হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন দাবার বিস্ময় প্রতিভা রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ (Rameshbabu Praggnanandhaa)। ১৮ বছরের প্রজ্ঞাকে হারতে হয়েছিল বিশ্বের এক নম্বর ম্যাগনাস কার্লসেনের (Magnus Carlsen)। তবে প্রজ্ঞা যে চৌষট্টি খোপের ‘জায়ান্ট কিলার’ তা বিশ্ব জানে। বিশ্বনাথন আনন্দের (Viswanathan Anand) উত্তরসূরী হিসেবে দেখা হচ্ছে তাঁকে। সেই প্রজ্ঞাই এখন শহর কলকাতায়। প্রজ্ঞা এসেছেন টাটার দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। এই চ্যাম্পিয়নশিপে আবার ভিশি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসডর। সোমবার সকালে প্রায় ৪৫ মিনিট প্রজ্ঞা কথা বললেন শহরের নির্বাচিত কিছু সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক অচেনা প্রজ্ঞাকেই পাওয়া গেল তিলোত্তমায়। প্রজ্ঞার কথোপকথনের নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।
আরও পড়ুন:
বিশ্বচ্য়াম্পিয়ন হওয়ার ব্য়াপারে কী ভাবছেন?
দেখুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা আমার মধ্যে রয়েছে। আশা করি, কয়েক বছরের মধ্যেই এই প্রতিযোগিতা জিততে পারব। এখন আমি যেখানে রয়েছি তার থেকেও ওপরে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে আমার।
ম্য়াগনাস কার্লসেনকে নিয়ে কী বলবেন?
অনলাইন অথবা অফলাইন দাবা, দু’টোতেই কার্লসেন মারাত্মক শক্তিশালী। ওর সামনাসামনি বসে খেললে তবুও বোঝার চেষ্টা করা যায় যে ও কী চাল দিতে পারে।কার্লসেনের থেকে আমি সবসময় শেখার চেষ্টা করি। শেষ ১০ বছর দাবার দুনিয়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ও কী চাল দিচ্ছে, কী ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে খেলছে, চাপের মুখ থেকে কী ভাবে ফিরে আসে, সব কিছু জানার চেষ্টা করি। ওকে প্রচুর প্রশ্ন করলেও বিরক্ত হয় না।
বিশ্বনাথন আনন্দের প্রভাব কতটা জীবনে?
ভিশি স্যরের অ্যাকাডেমিতে আমি দীর্ঘদিন ছিলাম। তাঁর থেকে অনেক কিছু শিখেছি। দাবার সব বিষয় নিয়েই আমাদের আলোচনা হয়। ম্যাচের আগের দিন আমার কী করা উচিত, শারীরিক ও মানসিক ভাবে শক্তিশালী থাকতে গেলে কী কী করতে হয়! এসব নিয়ে উনি আমাকে পরামর্শ দেন। ওঁর খেলা দেখে এখনও অনুপ্রাণিত হই।
সমর্থকদের প্রত্যাশা চাপ কি আপনাকে চাপে ফেলে?
সমর্থকেরা আমাকে পছন্দ করেন বলেই আমার প্রতি তাঁদের প্রত্যাশা বেড়েছে। আমি যদিও এতে কোনও চাপ অনুভব করি না। প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করি। প্রতি ম্য়াচেই সেরা দেওয়ার চেষ্টা করি।
সামনেই এশিয়ান গেমস, কলকাতায় প্রস্তুতি চলছে, ভারতের সম্ভাবনা কেমন?
আমাদের দলে গুকেশ, অর্জুন, নিহালের মতো দাবাড়ুরা রয়েছে। গুকেশ বর্তমানে ভারতের এক নম্বর দাবাড়ু। এশিয়ান গেমসে আমরা ভাল ফলই করব।
এশিয়ান গেমসের পর তো ক্যান্ডিডেটসেও রয়েছে, কী ভাবছেন?
প্রত্যেক ম্যাচে নিজের সেরাটা দেব। বাকিটা তো আমার হাতে নেই। আশা করি, ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে।
আপনার খেলায় মায়ের ভূমিকা?
আমি যেখানে যাই, আমার মা ইনডাকশান কুকার নিয়ে ঘোরেন। বিভিন্ন রান্না করে দেন। পছন্দের খাবার না পেলে আমার কষ্ট হয়। আমার মুখ দেখেই মা বুঝে যান ভাল খেলছি না খারাপ খেলছি।
দাবার বাইরে আর কোন খেলা ভালো লাগে?
দাবার পাশাপাশি ক্রিকেট খুবই পছন্দ করি। ভারতীয় দলের ম্যাচ খুব একটা মিস করি না। আমার প্রিয় ক্রিকেটার আর অশ্বিন। ওর খেললে দেখার চেষ্টা করি। তবে প্রত্যেক ভারতীয় ক্রিকেটারকেই আমি পছন্দ করি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের মুহূর্ত কেমন ছিল?
কথা বলে খুবই ভাল লেগেছিল। আমার ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলার সময় মনে হচ্ছিল যেন আপন কারোর সঙ্গেই কথা বলছি।
ভারতের দাবার ভবিষ্যৎ এবং নিজেকে কোথায় দেখতে চান!
আমি আরও উন্নতি করতে চাই। উঠতি দাবাড়ুদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে চাই। আমাকে দেখে যেন বাকিরা দাবা খেলতে আসে।
প্রজ্ঞা নিয়মিত যোগাসন ও মেডিটেশন করেন। ভিডিয়ো গেমস খেললে সমস্যা হয় বলে সেই খেলা তিনি খেলেন না। রিল্যাক্স করার জন্য ভাল সিনেমা দেখেন। ডায়েট নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত নন, চুটিয়ে উপভোগ করেন ভারতীয় খাবার।