জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: তাঁর নাম ‘স্থবির’, কিন্তু কর্মে তিনি তাঁর নাম-অর্থের সম্পূর্ণ বিপরীত। নিজের কর্ম-পরিসরে তিনি সদাসচল, সদাচিন্তক এক ব্যক্তি, যিনি শুধু রোগের চিকিৎসার মধ্যেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। বরং বারবার নিজেকে ‘নেক্সট লেভেলে’ তুলে নিয়ে গিয়েছেন। সেই ‘লেভেলে’র লক্ষ্য একটাই– জনস্বাস্থ্যের দিশা নির্ণয়। স্থবির দাশগুপ্ত স্বয়ং অত্যন্ত সুপরিচিত একজন অংকোলজিস্ট। ক্যানসার নিয়ে বিপুল কাজ তাঁর, লিখেছেন বইও। কৃতী ও গুণী এই মানুষটি আজ, মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে প্রয়াত হলেন।
আরও পড়ুন: Vibrio vulnificus: ভয়ংকর মারণক্ষমতাসম্পন্ন মাংস-খেকো এই ব্যাকটেরিয়া থেকে সাবধান!
স্থবির দাশগুপ্ত গত ১ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন। ৩ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সিওপিডি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও হাইপারটেনশনের মিলিত সমস্যায় ভুগছিলেন, ছিলেন ভেন্টিলেশনেও। তবে মঙ্গলবার প্রয়াত হলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘সেপ্টিক শক উইথ মাল্টি অর্গান ফেলিওরে’।
কিন্তু তাঁর মতো একজন চিকিৎসকের কাজ ও অবদানের প্রভাব মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যায় না। বহু রোগী যেমন তাঁর কথা স্মরণ করবেন, তেমনই বহু মানুষ, যাঁরা সরাসরি চিকিৎসাক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত নন, কিন্তু কোনও না কোনও ভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞান, রোগ, রোগতত্ত্ব, জনস্বাস্থ্য ইত্যাদি নিয়ে ভাবেন, কাজ করেন, তাঁরাও স্থবিরকে মনে রাখবেন। স্থবিরের লেখা ও তাঁর রোগ-ভাবনা বা নিরাময়-তত্ত্ব নিয়ে কাজ করবেন।
স্থবির দাশগুপ্ত ক্যানসার নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি, লোকস্বাস্থ্য বা জনস্বাস্থ্যের স্বাধীনতার ভাবনা নিয়েও কাজ করেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে এসেছে এমন উচ্চারণ– জনস্বাস্থ্য রাজনীতিরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ!
করোনা-পর্বেও স্থবির করোনা, এর চিকিৎসা, এবং জনস্বাস্থ্যের উপর করোনার প্রভাব, তজ্জনিত বিপন্নতা নিয়ে গভীর ভাবে ভেবেছেন। সেই সময়-পর্বের নানা লেখায় ছড়িয়ে আছে তাঁর সেই সব ভাবনার চিহ্ন।
আরও পড়ুন: Human Brains: ক্রমশ ছোট হচ্ছে মস্তিষ্ক! নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে পুরো মানবসভ্যতাই?
সারা জীবন নানা জার্নালে লেখালিখি করেছেন স্থবির। জ্বালিয়ে রেখেছেন ভাবনার অনির্বাণ আলো। রোগ, রোগের উপশম বা নিরাময়, রোগের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক সংযোগ ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে তিনি নির্মোহ ভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে করতে এগিয়েছেন। তৈরি করেছেন সোশ্যাল সায়েন্সের এক অন্যতর মনন-পরিসর। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে, আধুনিক রোগতত্ত্বের মহাস্থবির জাতক কি বলাই যায় স্থবির দাশগুপ্তকে?