Asansol District Hospital : বিনা পরীক্ষায় ডিসচার্জ স্লিপে এইচআইভি পজিটিভ, আসানসোল জেলা হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ সদ্য মা হওয়া বধূর – controversy over asansol district hospital writing hiv positive on discharge slip of a housewife without testing


এই সময়, আসানসোল: প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণের সমস্যা নিয়ে গত ২৫ অগস্ট আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সালানপুর থানা এলাকার এক বধূ। অভিযোগ, দ্রুত চিকিৎসা তো দূর, সন্তান কোলে নিয়ে থাকা ওই বধূ ও তাঁর মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন মেটারনিটি ওয়ার্ডের নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এখানেই শেষ নয়, হাসপাতালের বিরুদ্ধে উঠেছে আরও গুরুতর অভিযোগ। চিকিৎসার জন্য ওই বধূকে অন্যত্র নিয়ে যেতে ডিসচার্জ স্লিপ চাওয়া হলে তার উপরে হাতে লিখে দেওয়া হয়েছে ‘এইচআইভি পজিটিভ’। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, সে সংক্রান্ত কোনও পরীক্ষাই সেদিন করানো হয়নি ওই বধূকে। এর পর ২৯ অগস্ট ফের আসানসোল জেলা হাসপাতালে এসে এইচআইভি পরীক্ষা করান ওই বধূ ও তাঁর স্বামী। এবং সেদিন দু’জনরেই রিপোর্ট আসে নেগেটিভ।

Purba Medinipur : জন্মদিনে প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে তরুণীর রহস্যমৃত্যুতে খুনের অভিযোগ
৪ দিনের মধ্যে এইচআইভি রিপোর্ট পজিটিভ থেকে নেগেটিভ হওয়া নিয়ে বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে আসানসোল জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কোনও রক্ত পরীক্ষা না-করেই ওই বধূকে এইচআইভি পজিটিভ বলে দাগিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন বধূ ও তাঁর পরিবার। পুরো ঘটনা ও তার জেরে হওয়া হেনস্থা ও মানসিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য সচিব থেকে শুরু করে পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁরা।

Bankura Murder Case : তুচ্ছ কারণে বিবাদ, জামাইবাবুকে খুনে অভিযুক্ত ‘গাঁজাখোর’ শ্যালক! কোতলপুরে রহস্য
ইতিমধ্যে এ নিয়ে প্রশাসনিক তৎপরতাও শুরু হয়েছে। সোমবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মহম্মদ ইউনুস জানান, জেলাশাসকের থেকে অভিযোগপত্র পেয়ে ৩ সদস্যের কমিটি তৈরি করে অবিলম্বে তদন্ত শুরু করতে বলা হয়েছে জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সেই রিপোর্ট পাঠানো হবে তাঁকে। দোষ প্রমাণিত হলে কেউ ছাড় পাবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, আজ, মঙ্গলবার বেলা ৩টের সময় তদন্তের জন্য অভিযোগকারীদের ডেকে পাঠিয়েছেন জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানা গিয়েছে, গত ৯ জুলাই পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো হাসপাতালে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন সালানপুর থানা এলাকার বাসিন্দা ২৬ বছরের ওই যুবতী। ১১ জুলাই সদ্যোজাতকে নিয়ে সুস্থ অবস্থায় সালানপুরে বাবার বাড়িতে আসেন তিনি। কিন্তু গত ২৫ অগস্ট সন্ধ্যা থেকে আচমকা রক্তক্ষরণ হতে থাকে তাঁর। রাত ৯টা নাগাদ তাঁকে আসানসোল জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান তাঁর মা। সঙ্গে ছিল ৬ সপ্তাহের শিশুটিও। সেখান থেকে হাসপাতালের মেটারনিটি ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয় ওই বধূকে।

Howrah News Today : চিকিৎসার গাফিলতিতে সদ্যোজাত শিশু মৃত্যুর অভিযোগ, তুলকালাম হাওড়ার হাসপাতালে
অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ পার হয়ে গেলেও ওয়ার্ডে কোনও বেড দেওয়া হয়নি তাঁকে। বেড চাইতে গেলে ওয়ার্ডের এক নার্স তাঁদের এক কোণে গিয়ে বসে থাকতে বলেন। অভিযোগ, তখন শিশুটিকে কোলে নিয়ে নিজের রক্তক্ষরণের বিষয়টি জানালে ওই বধূকে সেই নার্স বলেন, ‘বসতে বলেছি, চুপ করে বসো। বেশি ডিস্টার্ব করবে না। এদিক-ওদিক ঘুরবে না।’ ইতিমধ্যে পরিবারের আরও কয়েকজন হাজির হন হাসপাতালে। শেষে উপায়ন্তর না-দেখে এবং কোনও চিকিৎসা শুরু না-হওয়ায় ওই বধূকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।

Medical College : পরিষেবা বাড়াতে বাংলায় নয়া ৪ মেডিক্যাল কলেজ, শীঘ্রই আবেদন কেন্দ্রের কাছে
ওই নার্সদের কথামতো লিখিত আবেদন করলে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ স্লিপও দেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যায়, সেই স্লিপের উপরে বাঁ দিকে বড় হাতের লেখায় লেখা রয়েছে ‘এইচআইভি পজিটিভ’। কোনও পরীক্ষা না-করেই এটি কেন লেখা হয়েছে জানতে চাইলে নার্স বা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের থেকে কোনও জবাব মেলেনি বলে অভিযোগ।

এর পর সেদিন রাতেই কুলটির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ওই বধূকে। কিন্তু জেলা হাসপাতালের ডিসচার্জ স্লিপে ‘এইচআইভি পজিটিভ’ উল্লেখ রয়েছে দেখে কুলটির হাসপাতাল ভর্তি নেয়নি ওই বধূকে। শেষ পর্যন্ত গত ২৭ অগস্ট ঝাড়খণ্ডে রাঁচির রিমস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অসুস্থ ওই যুবতীকে। সেখানে তাঁর ইউএসজি এবং অন্যান্য পরীক্ষা করিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধের ওষুধ ও বেড রেস্টে থাকার পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এইচআইভি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ওই বধূ ও তাঁর পরিবারকে জানান, এ নিয়ে ভাবার কোনও প্রশ্নই নেই।

Manipur Firing : ফের উত্তপ্ত মণিপুর, গুলির লড়াইয়ে মৃত ২
এবং ফের আসানসোল জেলা হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। সেই মতো গত ২৯ অগস্ট জেলা হাসপাতালে পৌঁছে সরকারি ভাবে এইচআইভি পরীক্ষা করান ওই বধূ ও তাঁর স্বামী। এবং দু’জনেরই রিপোর্ট নেগেটিভ বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠছে, কোনও পরীক্ষা না-করিয়েই ডিসচার্জ স্লিপে কেন লেখা হলো ‘এইচআইভি পজিটিভ’? কেন সদ্য মা হওয়া অসুস্থ যুবতীকে সুষ্ঠু চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার বদলে চরম হেনস্থা করা হলো? কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে? জানতে চাইছে বছর ২৬-এর ওই বধূ ও তাঁর পরিবার।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *