CV Ananda Bose : সংঘাত-বৃত্তে শিক্ষামহলও, ভিডিয়ো-বার্তায় প্রাক্তন ভিসিদের নিশানা বোসের – education administrators were also embroiled in the ongoing conflict over the appointment of vice chancellors in state universities


এই সময়: রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে এতদিন রাজ্য বনাম রাজ্যপাল সংঘাত চলছিল। এ বার সেই বৃত্তে ঢুকে পড়লেন শিক্ষা প্রশাসকরাও। নেপথ্যে রাজ্যপালের কিছু মন্তব্য, যা তিনি বৃহস্পতিবার ভিডিয়ো-বার্তার মাধ্যমে সামনে এনেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে রাজভবন থেকে আচার্য-রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের পৌনে ছ’মিনিটের এক ভিডিয়ো বার্তা রিলিজ় করা হয়। যেখানে তিনি বলেন, ‘রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার জন্য চাই উপাচার্য। বাংলার উচ্চশিক্ষা দপ্তর যে ভিসি-দের নিয়োগ করেছিল, সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের বেআইনি বলেছে। তাই সব উপাচার্য ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন।

CV Ananda Bose : ‘শেষ অবধি লড়ব…’, মমতাকে বোসের পালটা! বাংলায় ভাষাতেই বিস্ফোরক বিবৃতি রাজ্যপালের
এই অবস্থায় আমি অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছি।’ তাঁর সংযোজন, ‘শিক্ষা দপ্তর বলল, এটা ভুল। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট বলল, আমিই ঠিক।’ রাজ্যের মানুষের উদ্দেশে বোসের বার্তা – ‘আপনারা জানতে চাইবেন, কেন আমি সরকারের মনোনীত ভিসিদের মনোনীত করিনি? এটা সত্য যে এঁদের কেউ ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত, কেউ ছাত্রীদের হেনস্থা করেছেন, আবার কেউ রাজনীতির খেলা খেলছিলেন। এখন বলুন, অন্তর্বর্তী উপাচার্যরা কেউ দুর্নীতিগ্রস্ত হবেন, কেউ ছাত্রীদের হেনস্থা করবেন, তাঁদের মেনে নেওয়া যায়!’

CV Ananda Bose : উপাচার্য কে? বোস-বাক্যে ধন্দে ইন্ধনই
এমন সব অভিযোগের মুখে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ ওই প্রাক্তন উপাচার্যরা। এ দিন দুপুরেই ‘দ্য এডুকেশনিস্ট ফোরাম, ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর তরফে ওমপ্রকাশ মিশ্র ও দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় এক বিবৃতিতে জানান – আজ, শুক্রবার রাজভবনের নর্থ গেটের বিপরীতে সকাল ১১টা থেকে শান্তিপূর্ণ ও নীরব অবস্থানে বসবেন রাজ্যে উচ্চশিক্ষায় যুক্ত মানুষরা। নেতৃত্ব দেবেন বেশ কিছু শিক্ষাবিদ।

CV Ananda Bose : মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিকে ‘ডোন্ট কেয়ার’! ফের আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ রাজ্যপাল বোসের
এ দিন রাজ্যপাল অবশ্য শুধুই প্রাক্তন উপাচার্যদের নিশানা করে থামেননি। তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গও। গত ৫ তারিখ শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপাল-মনোনীত উপাচার্যদের উদ্দেশে জানিয়েছিলেন, যে ভিসিরা রাজ্যপালের কথা শুনে চলবেন, তাঁদের আর্থিক বাধার মুখে পড়তে হবে। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে রাজভবনের বাইরে ধর্নায় বসবেন বলেও হুমকি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লি থেকে ফিরে কলকাতা বিমানবন্দরের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে বোস পাল্টা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী আমার সহকর্মী। তাঁকে রাজভবনে স্বাগত। তিনি রাজভবনের ভিতরে এসেই তাঁর যাবতীয় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দেখাতে পারেন।’

চুপ করে থাকেনি শাসক শিবির। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সরাসরি মুখ না খুললেও রাজ্যপালের ভিডিয়ো বার্তাকে ‘সুপরিকল্পিত চিত্রনাট্য’ বলে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘উনি ওই চিত্রনাট্য নিয়ে বিজেপির এজেন্টের কাজ করছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হয়েছে, সবাই দেখেছে। তা নিয়ে তদন্তও হচ্ছে। কিন্তু রাজ্যপাল কোথা থেকে কাদের ধরে এনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মাথায় বসাচ্ছেন! যাঁরা শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্তই নন, কিন্তু ঘোষিত বিজেপি!’

CV Ananda Bose : ‘ভারপ্রাপ্ত ভিসি’ আচার্য বোসই! অনলাইনে রাজ্যপালের সঙ্গে সরাসরি দেখা করার সুযোগ
এ দিকে, রাজ্যপাল এ দিন তাঁর ভিডিয়ো-বার্তায় যে প্রাক্তন ভিসিদের নিশানা করেছেন, তাঁদের অনেকেই নিজেদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত। যেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ। তিনি ‘ফেলো অফ রয়াল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রি (লন্ডন)’ এবং ‘ফেলো অফ ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স (বেঙ্গালুরু)’-এর বিজ্ঞানী। আশুতোষের বক্তব্য, ‘শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে মে-জুন মাসে আমাদের নামে সুপারিশ করলেও রাজ্যপাল-আচার্য আমাদের পুনর্নিয়োগ করেননি।

Bratya Basu News : ‘যাহা চালভাজা তাহাই মুড়ি…’, বোসের ‘সিদ্ধান্ত’-কে কটাক্ষ ব্রাত্যর, আইনি পথে হাঁটার হুঁশিয়ারি
আচার্য তখন উচ্চশিক্ষা দপ্তরকে জানিয়েছিলেন, তাঁর নির্দেশ মতো আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কাজকর্মের সাপ্তাহিক রিপোর্ট সরাসরি রাজভবনে পাঠাইনি বলেই আমাদের পুনরায় নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি।’ আশুতোষের সংযোজন, ‘এতে আমাদের কিছু করণীয় ছিল না। কারণ, উচ্চশিক্ষায় ২০১৯-এর ৯ ডিসেম্বরের বিধি অনুযায়ী, উপাচার্য ও আচার্য একে অপরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন না। উচ্চশিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমেই তা করতে হয়। অথচ এখন ২৫ জন শিক্ষাবিদ তথা প্রাক্তন উপাচার্যের বিরুদ্ধে আচার্য ছাত্রীদের হেনস্থা, দুর্নীতি এবং রাজনীতির খেলায় যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলছেন! আচার্যর এই অভিযোগ, অনভিপ্রেত ও অত্যন্ত দুঃখজনক।’

তাঁর আক্ষেপ, ‘ওই ২৫ জন প্রাক্তন উপাচার্যের মধ্যে একাধিক মহিলা উপাচার্যও ছিলেন। আমার মতো মানুষ রয়েছেন। আচার্যের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেশ-বিদেশের অনেকে পরিচিতই আমাদের কাছে এ সব নিয়ে জানতে চাইছেন।’ এ সবের মধ্যেই সূচি অনুযায়ী আজ, শুক্রবার দুপুর থেকে দফায় দফায় রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রেজিস্ট্রারদের সঙ্গে বিকাশ ভবনে বৈঠকে বসার কথা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর। সেখানে তাঁদের না-যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে বলে উচ্চশিক্ষা দপ্তরে অভিযোগ পৌঁছেছে।

Governor of West Bengal: ‘রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভার বিদূষককে রাজ্যপাল করে পাঠিয়েছে…’, সিভি আনন্দ বোসকে কটাক্ষ ব্রাত্যর
এ ক্ষেত্রে কাঠগড়ায় উপাচার্যরা। বেশ ক’জন রেজিস্ট্রার বিষয়টি বিকাশ ভবনের কর্তাদের জানিয়েছেন। অভিযোগ, রেজিস্ট্রারদের জানানো হয়েছে, রাজভবন থেকে আসা নির্দেশ অনুযায়ীই নাকি তাঁদের বৈঠকে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। এই টানাপড়েনে কোনও কোনও অস্থায়ী রেজিস্ট্রার হয় পদত্যাগ করছেন, বা ছুটিতে চলে গিয়েছেন বলে খবর।

যেমন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন নূপুর দাস। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য রথীন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রেজিস্ট্রারকে শিক্ষামন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে যেতে ‘নিষেধ’ করা হয়েছিল। রাজভবন থেকে সেই বার্তা পাওয়ার পরই নূপুরকে এ কথা জানানো হয়। উত্তরবঙ্গের অস্থায়ী রেজিস্ট্রার পদে নূপুরের মেয়াদ ছিল ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তার আগেই তিনি সরে দাঁড়ালেন। সূত্রের খবর, এর পিছনে ‘ব্যক্তিগত কারণ’-এর উল্লেখ করেছেন তিনি। রথীন বলেন, ‘আমি ইস্তফাপত্র পেয়েছি। কিন্তু সেটা দেখা হয়নি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *