বাংলার বিজেপি নেতা-কর্মীদের পান থেকে চুন খসলেই অভিযোগ জানানোর প্রবণতা সম্পর্কে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বিরক্তিও প্রকাশ করেছেন। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতার মন্তব্য, ‘পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের পাঠানো চিঠি, ই-মেল সব যদি নাড্ডাজিকে পড়তে হয়, তা হলে অন্য কোনও কাজ করার সময় তিনি পাবেন না।’
বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার প্রাক্তন রাজ্য সহ-সভাপতি শামসুর রহমান সম্প্রতি নাড্ডাকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছেন, ৬ মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপি দপ্তরে দলের এক নেতার উদ্যোগে মদের আসর বসছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিভিন্ন খাতে যে টাকা রাজ্য বিজেপি দপ্তরে পাঠাচ্ছেন, তাও নয়ছয় হচ্ছে। ক’দিন আগেই বিজেপির এক রাজ্য সম্পাদকের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন বিজেপির জেলাস্তরের কিছু নেতা। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে সমন্বয় ঘটানোর আর্জি জানিয়েও গত একমাসে নাড্ডাকে একাধিক চিঠি ইমেল করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
এর পাশাপাশি ইডি-সিবিআই এখনও কেন নিষ্ক্রিয়, তা-ও ই-মেল করে নাড্ডা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন বঙ্গ-বিজেপির নিচুতলার বহু নেতা-কর্মী। রাজ্য বিজেপির এক পদাধিকারীর কথায়, ‘পরিসংখ্যান খুব ভুল না হলে গত এক সপ্তাহে অন্তত শ’খানেক চিঠি নাড্ডাজির কাছে পাঠানো হয়েছে। যাঁরা বিজেপি সভাপতিকে চিঠি লিখে ভাবছেন, বিশাল কিছু কাজ করেছেন, তাঁরা জানেন না যে দলের সর্বভারতীয় সভাপতির এত চিঠি পড়ার সময় নেই।’
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে কোনও ইস্যুতে দিল্লিতে অভিযোগ জানানো পছন্দ করেন না, সেটা স্পষ্ট। দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (সাংগঠনিক) বিএল সন্তোষ নিজে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন রাজ্য বিজেপি নেতাদের। অতীতে বহুবার তিনি সুকান্তদের বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলার বিজেপি নেতাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানো দিল্লির নেতাদের কাজ নয়। এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘কিছু চিঠির অবশ্যই গুরুত্ব ও তাৎপর্য থাকে। কিন্তু অনেকেই আবার পত্র-সাহিত্যচর্চা করার জন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের চিঠি লেখেন। ইন্টারনেটের যুগে চিঠি লেখা তো উঠেই গিয়েছে। কেউ যদি সাহিত্যের সেই ধারা বাঁচিয়ে রাখার জন্য শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে পত্রালাপ করতে চান, করুন।’
এর আগে অমিত শাহ সভাপতি থাকাকালীন তাঁকেও এই ‘পত্র-বিড়ম্বনায়’ পড়তে হয়েছিল। গত বছর বাংলায় বামেদের নতুন করে উত্থানের প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করে নাড্ডাকে চিঠি লিখেছিলেন বঙ্গ-বিজেপির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। তারপরে একই বিষয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে বিজেপি নেতা-কর্মীরা শ’খানেক চিঠি নাড্ডাকে ই-মেল করেছিলেন। চলতি সপ্তাহেই বিজেপির প্রাথমিক সদস্যপদ ছাড়ার কথা জানিয়ে এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে নাড্ডাকে চিঠি লিখেছেন চন্দ্র বসুও।