বর্ধমান শহরে চলবে মেট্রো রেল! তাও আবার একটি নয়, দু’টি রুটে চলবে মেট্রো। প্রথমটি আলিশা বাস স্ট্যান্ড থেকে বর্ধমান রেলস্টেশন পর্যন্ত ও দ্বিতীয় রুটে বর্ধমান স্টেশন থেকে মেট্রো যাবে নবাবহাটে। তৈরি করা হয়ে গিয়েছে প্রস্তাবিত এই দু’টি রুটের স্কেচ ম্যাপও। হাতে আঁকা সেই ম্যাপে স্টপেজও দেওয়া রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল সেই পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ‘প্রকল্প শুরু ২০২৫-২০২৭ সালে।
শেষ হওয়ার আনুমানিক সাল ২০৩৩।’ আর তাতেই বিস্তর জলঘোলা শুরু হয়েছে। সেই ম্যাপ দেখে অনেকেই সাংবাদিক বা জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছ থেকে শুরু করে বর্ধমান স্টেশনের অনুসন্ধান কেন্দ্রে গিয়েও খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু রেলের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এমন কোনও পরিকল্পনার কথা রেলের প্রস্তাবিত কোনও মিটিংয়ে বা অন্য কোথাও কোনও ভাবেই আলোচনা হয়নি।
তা হলে বর্ধমানে মেট্রো চালু হওয়ার অপপ্রচারের নেপথ্যে কে বা কারা? কেনই বা এমন ভুয়ো খবর হাওয়ায় ভাসানো হলো? ইতিমধ্যে রেলের পক্ষ থেকে এ নিয়ে বিভিন্ন স্তরে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে দেখেছেন রেলের আইবি দপ্তরের আধিকারিকরাও। বিষয়টি নিয়ে রেল রীতিমতো কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে বলে সূত্রের খবর। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক (সিপিআরও) কৌশিক মিত্র বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরেও এসেছে। একেবারে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন একটা প্রচার সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে করা হচ্ছে।
‘ কারা রয়েছে এর পিছনে? সিপিআরও-র বক্তব্য, ‘নিজেদের ফ্ল্যাটের বা জায়গার দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে এটা করাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু প্রোমোটার চক্র।’ যারা এই কাজটি করেছে তাদের বিরুদ্ধেও রেলের পক্ষ থেকে খোঁজখবর শুরু করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সিপিআরও সাফ বললেন, ‘বর্ধমানের ৩ জন প্রোমোটার এই স্কেচ ম্যাপ তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালিয়েছে। এই ৩ জনেরই আলিশা ও উল্লাস মোড় এলাকায় বেশ কিছু ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে।’
শহরে মেট্রো চললে চড়চড় করে দাম বাড়বে ফ্ল্যাটের। সেই ফর্মুলা কাজে লাগিয়ে এবং এই ভুয়ো ম্যাপ দেখিয়ে ফ্ল্যাট বিক্রির জোরদার চেষ্টা চালাচ্ছে আলিশা, উল্লাস মোড় এলাকার একাধিক নির্মাণ সংস্থা। পাশাপাশি ফ্ল্যাটের দামও প্রতি বর্গফুটে প্রায় পাঁচশো টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। পালসিটের বাসিন্দা মহাদেব হাজরা বলেন, ‘আমি উল্লাস মোড়ের একটি আবাসনে গিয়েছিলাম ফ্ল্যাটের জন্য। তখন সেখানে থাকা এক এগজিকিউটভ আমাকে এই ম্যাপের প্রিন্ট আউট দেখিয়ে বলেছিল, মেট্রো তৈরি হওয়ার প্রস্তাব রয়েছে এই এলাকায়।
পরে হাওড়া ডিভিশনে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে এটা নকল।’ সিপিআরও কৌশিক মিত্র বলেন, ‘এমন ভাবেই প্রতারণা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা রেলের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ জানিয়েছি। কোথা থেকে কীভাবে এই প্রচার করা হচ্ছে সেটি তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে।’