আদতে খড়দহের বাসিন্দা ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ দীপ্যমান কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী। ইমিউনোলজির অত্যাধুনিক গবেষণার জন্য ল্যাব-পরিকাঠামো তৈরির পাশাপাশি অটো-ইমিউনিটি ও মেটাফ্লামেশন এবং অতিমারী পর্বে কোভিড নিয়ে গবেষণার জন্য তাঁকে এই পুরস্কারে সম্মানিত করা হল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। ভাটনগর পুরস্কার দেয় কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীন কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর)। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডলে দীপ্যমানবাবুর ভূয়সী প্রশংসা করে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এদিন বিকেলে।
দীপ্যমানের পাশাপাশি আরও চার জন বাঙালি গবেষক এ বছর ভাটনগর পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁরা হলেন মুম্বই আইআইটি-র দেবব্রত মাইতি, বেঙ্গালুরুর মাইক্রোসফট রিসার্চ ল্যাবের নীরজ কয়াল, বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের অনিন্দ্য দাস এবং মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের বাসুদেব দাশগুপ্ত। দেবব্রত কেমিক্যাল সায়েন্সে, নীরজ ম্যাথেমেটিক্যাল সায়েন্সে এবং অনিন্দ্য ও বাসুদেব ফিজ়িক্যাল সায়েন্সে এই পুরস্কার পেয়েছেন। তবে বঙ্গের কোনও প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বাঙালি হিসেবে এ বছর এই সম্মান পেয়েছেন কেবল দীপ্যমান।
বাংলায় কাজ করে একমাত্র বাঙালি হিসেবে পুরস্কৃত হওয়ার ক্ষেত্রে মেডিক্যাল সায়েন্স বিভাগেও দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়েছেন দীপ্যমানবাবু। বহু বছর পরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে দীপ্যমানের পুরস্কার প্রাপ্তির কথা মুখ্যমন্ত্রীও তাঁর এক্স হ্যান্ডলে ব্যক্ত করেছেন এদিন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মহলের একাংশের দাবি, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ১৯৮৫-র পর আর কোনও বাঙালি বাংলায় কাজ করে ভাটনগর পুরস্কার পাননি।
নিউরোসায়েন্সে অবদানের জন্য সে বছর এই পুরস্কার পেয়েছিলেন ডিকে গঙ্গোপাধ্যায়। তার পর বীরেন্দ্রনাথ মল্লিক (নিউরোবায়োলজি/২০০১), অনিলকুমার মণ্ডল (নিউরো-ফিজিওলজি/২০০৩), মিতালি মুখোপাধ্যায় (গ্লকোমা/২০১০) ও সন্দীপ বসু (হিউম্যান জিনোমিক্স/২০১২) ভাটনগর পুরস্কার পেলেও তাঁরা প্রত্যেকেই রাজ্যের বাইরের প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।
স্বাভাবিক ভাবেই এমন একটি সম্মান পেয়ে উচ্ছ্বসিত দীপ্যমান। ‘এই সময়’কে তিনি বলেন, ‘এত বছর পর মেডিক্যাল সায়েন্সে যে বাংলার প্রাপ্তি হলো, সেটাই আমায় রোমাঞ্চিত করছে।’ চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশেরই বক্তব্য, ডাক্তারি পাস করার পরেও ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসের জৌলুস থেকে নিজেকে দূরে রেখে যে ভাবে এই ইমিউনোলজিস্ট নিরলস গবেষণা করে চলেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের একেবারে মৌলিক বিষয়ে, তা কুর্নিশ করার মতো।
এখন ঢাকুরিয়ায় থাকলেও দীপ্যমানবাবুদের আদি বাড়ি খড়দহের রিজেন্ট পার্কে। প্রায় এক দশক আগে সেখান থেকে সপরিবারে কলকাতায় চলে আসে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার। ছেলের এই সম্মানে আপ্লুত দীপ্যমানবাবুর মা সঙ্ঘমিত্রা গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। এতদিনের পরিশ্রমের ফল পেল ও। মানুষের স্বার্থে আরও গবেষণা করুক, এটাই চাই।’