সোমবার দেরাদুনের সিরওয়ালগড়ে রাস্তার ধার থেকে এক তরুণীর দেহ অজ্ঞাতপরিচয় হিসাবে উদ্ধার করে উত্তরাখণ্ড পুলিশ। তারপরে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে এবং লোকাল সোর্স মারফত গাড়িটিকে চিহ্নিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খুনের কিনারা করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত রামেন্দু উপাধ্যায়কে। তিনি আবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল। সোমবার পণ্ডিত্বারী প্রেমনগরের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে।
দেরাদুনের ক্লেমেন্ট টাউন ক্যান্টনমেন্টে পোস্টেড রামেন্দুকে জেরা করে মৃতের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হন তদন্তকারীরা। জানা যায়, রাস্তার ধার থেকে উদ্ধার হওয়া তরুণীর নাম শ্রেয়া শর্মা। বাড়ি আদতে নেপালে হলেও থাকতেন শিলিগুড়িতে। সেখানকারই একটি ডান্স বারে কাজ করতেন তরুণী। রামেন্দুও এক সময়ে শিলিগুড়িতেই ছিলেন। ওই বারে যাতায়াতের সময়েই শ্রেয়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তারপর বছর তিনেক দু’জনের প্রেম পর্ব চলছিল। শিলিগুড়ি থেকে বদলি হয়ে বছরখানেক আগে দেরাদুনে আসেন রামেন্দু। দু’জনের যোগাযোগ এতটাই ছিল যে দেরাদুনে শ্রেয়ার জন্য একটা ফ্ল্যাটও ভাড়া করেছিলেন তিনি। সেখানেও দু’জনের নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ ছিল, দু’জনে মাঝেমধ্যে একসঙ্গে থাকতেনও।
এই ঘনিষ্ঠতার পরেও কেন খুন?
মঙ্গলবার দেরাদুন পুলিশ দাবি করেছে, জেরায় রামেন্দু স্বীকার করেছেন, শ্রেয়া তাঁকে বিয়ের জন্য বারবার চাপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি যেহেতু আগেই বিবাহিত, তাই তাঁর পক্ষে শ্রেয়াকে বিয়ে করা সম্ভব ছিল না। এ নিয়েই দু’জনের মধ্যে ঝামেলা হতো। এরপরেই শ্রেয়াকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করছিলেন তিনি।
শনিবার রাতে শ্রেয়াকে তিনি প্রথমে নিয়ে যান রাজপুর রোডের একটি ক্লাবে। অনেক রাত পর্যন্ত দু’জনে খাওয়াদাওয়া করেন। এরপরে তাঁকে লং ড্রাইভে নিয়ে যাওয়ার নাম করে গাড়িতে তোলেন রামেন্দু। রাজিও হয়ে যান শ্রেয়া। রাত দেড়টা নাগাদ থানো রোডে গাড়ি পৌঁছানোর পরে একটা নির্জন জায়গা দেখে রাস্তার ধারে গাড়ি পার্ক করেন রামেন্দু। সেখানেই শ্রেয়ার মাথায় বারবার হাতুড়ির ঘা মারতে থাকেন, যতক্ষণ না তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হচ্ছে। সবশেষে শ্রেয়ার দেহ রাস্তার ধারে ঝোপের মধ্যে ফেলে দেন রামেন্দু। সোমবার সকালে দেহটি নজরে আসে পুলিশের। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেলের গাড়ি, সেই রাতে তাঁর পোশাক- সবকিছুই ফরেন্সিকে পাঠানো হচ্ছে। শ্রেয়ার আসল ঠিকানা জেনে তাঁর বাড়ির সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।