মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়ার অভিযোগ
গত ১১ সেপ্টেম্বর চন্দননগর হাসপাতালে আউটডোরে চিকিৎসার জন্য আসেন বছর ৪৯ এর মালতী মল্লিক। ভাইরাল একটি ভিডিয়োতে এক যুবককে বলতে দেখা যাচ্ছে, ‘হাসপাতাল থেকে মাকে দেওয়া হয় ওষুধ। আমার মা পড়াশোনা জানে না । মা জিজ্ঞেস করে খাব বাবু ওষুধ । দেখতে গিয়ে দেখা যায় তিন মাস আগে ওষুধটার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে।’ ওই যুবক প্রশ্ন তোলেন, একজন রোগীকে কিভাবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ওষুধ দেওয়া হল? এর পরে তিনি হাসপাতাল সুপারকে বিষয়টি জানাবেন বলেও শোনা যায় ভিডিয়োতে। বিষয় নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় গোটা চন্দননগর শহর জুড়ে।
BJP সভাপতির অভিযোগ
ওই হাসপাতালের দেওয়া প্রেসক্রিপশন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ মুখ্যমন্ত্রীর অফিসিয়াল পেজে ট্যাগ করে ১৩ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বুধবার টুইট করেন BJP রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সেখানে তিনি লেখেন,’TMC-WB এর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে জরাজীর্ণ অবস্থায় টেনে এনেছে। চন্দননগর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রোগীদের মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এর কারণে যে জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তার দায় কে নেবে ?’
মণ্ডল সভাপতির নিশানায় হাসপাতাল
এ নিয়ে শুরু হয়েছে শাসক বিরোধী তরজা। চন্দননগরের BJP-র মন্ডল সভাপতি গোপাল চৌবে বলেন, ‘চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালের পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। ১১ তারিখ এক রোগী চন্দননগর হাসপাতালে আসেন ডাক্তার দেখাতে। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন মতো আউটডোর থেকে ওষুধ নিয়ে বাড়ি যান। ওষুধ খাবার সময় ছেলেকে দেখান । পরেই ছেলে দেখে ওষুধ এক্সপায়ার হয়ে গেছে । ঘটনার কথা জানতে পারার পরেই আমি চন্দনগর হাসপাতালে হাজির হই । রোগীকে নিয়ে সুপারের কাছে যাই। এর আগেও একাধিকবার এধরনের ঘটনা ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলছেন দিদির অনুপ্রেরণায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। এটাই কি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের উদাহরণ, যেখানে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া হচ্ছে রোগীদের । রোগী যদি মারা যায় তার দায় ভার কে নেবে?’
তৃণমূলের বয়ান
চন্দননগর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য ও তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ সারথি দত্ত বলেন , ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। সরকার যেভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি করেছে সেখানে কিছু কর্মচারীর ভুলের জন্য যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে সেটা দুঃখজনক। আমি নিজেও এটা দেখছি। যে ছেলেটি অভিযোগ করছেন সে একটি বিশেষ পার্টির সঙ্গে যুক্ত। সত্যটা কতটা আছে দেখতে হবে, কোনরকম কিছু হয়ে থাকলে যারা দোষী তাদের তদন্তের করে শাস্তি দেওয়া হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ কেন দেওয়া হবে। মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা খরচা করছে। কিছু মানুষের গাফিলতির জন্য যদি এটা ঘটে থাকে সেটা নিন্দনীয় এবং এর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হাসপাতালের ফার্মাসিস্টকে শোকজ
এবিষয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভূঁইয়া বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা সামনে আসতেই হাসপাতাল সুপার ফার্মাসিস্টকে শোকজ করা হয়েছে।এটা নজর এড়িয়ে কিভাবে হল সেটার জন্য তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এমনকি রাজ্যে স্বাস্থ্য দফতরে একটি রিপোর্টও পাঠানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তিনমাস অন্তর ওষুধের ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন হয়। এর জন্য হিসাবও রাখতে হয়। যিনি করেছেন এটা কেন হয়েছে তার জন্য শোকজ করা হয়েছে স্বাস্থ্য কর্মীকে।’